.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ সংখ্যা : মারিয়ম ফেরদৌসী

চিরাচলিত আখ্যানের বিপ্রতীপে বিষয়গত ও প্রকরণগত অভিনবত্ব : ভিন্ন স্বাদের বহুস্তরীয় এক পাঠ 
“All narrative consists of a discourse which integrates a sequence of events of human interest into the unity of a single plot.” [Bremond, 1980 : 390] অর্থাৎ, প্লটপন্থী আখ্যানতাত্ত্বিকদের মতে, সাহিত্যিকদের অভিজ্ঞতাঋদ্ধ ঘটনা সমূহের সম্মিলিত নির্যাসে প্লট নির্মিত হয়। কিন্তু আধুনিক আখ্যানতত্ত্বানুসারী পন্ডিতগণ ‘content’ বা ‘discourse’ এর পরিবর্তে ‘way of expression’ বা প্রকরণকে শিল্পসম্মত প্রকাশ বলে মান্যতা প্রদান করেছেন। ‘সাহিত্যের সামগ্রী’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানিয়েছেন “ভাব, বিষয়, তত্ত্ব সাধারণ মানুষের। … কিন্তু রচনা লেখকের সম্পূর্ণ নিজের। সেইজন্য রচনার মধ্যেই লেখক যথার্থ রুপে বাঁচিয়া থাকে; ভাবের মধ্যে নহে, বিষয়ের মধ্যে নহে।’’ অমিতাভ দাস তাঁর ‘আখ্যানতত্ত্ব’ গ্রন্থের ভূমিকাংশে সুস্পষ্ট মন্তব্য করেছেন “শিল্পের স্বভাবই হল তার প্রকরণকে গোপন করা, যাতে উপকরণগুলির জোড়ের চিহ্ন ধরা না পড়ে, যাতে পুরোটা মিলিয়ে সম্পূর্ণত একটি ঐক্যের ডৌল্যসাম্য গড়ে ওঠে। তাকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না, ইঙ্গিতময়তার নানা আভা তাকে ঘিরে থাকে।” এই ইঙ্গিতময়তাকে অবলম্বন করে তথাকথিত আখ্যান রচনার ঐতিহ্যের দেয়ালে আঘাত হেনে মঞ্চে রগরগে আবির্ভাব ওপার বাংলার ছোটো কাগজ আন্দোলনের পরিচিত মুখ সৈয়দ রিয়াজুর রশিদের ‘হাতিয়ারওয়ালা’ নামক ছকভাঙ্গা উপন্যাসটির। একরৈখিক কাহিনীর বৃত্তকে ভেঙ্গে আখ্যানের বহুস্বর উপন্যাসকে মৌলিকতা প্রদান করেছে। বিশেষত ডায়েরীধর্মীতা, সুদূর ইতিহাসে কারাবালার প্রান্তরে হোসেনের প্রতি এজিদের হিংস্রতা থেকে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রক্তস্নাত রাজনৈতিক পাশাখেলা ইত্যাদি ল্যান্ডমার্ক স্থাপনকারী হাতিয়ারওয়ালাদের যুদ্ধন্মোত্ততার কাহিনী টুকরো টুকরো রূপে বিবৃত হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে সংবাদপত্রের রিপোর্ট জায়গা করে নিয়েছে উপন্যাসের আখ্যানে। ‘Civil War breaks out in Pakistan’ … “In March a bitter and bloody civil war broke out in Pakistan after takes on the autonomy of East Pakistan collapsed between Zulfikar Ali Bhutto and Sheikh Mujibur Rahman, Leader of Awami League.” এ উপন্যাস হত্যায় উন্মত্ত পৃথিবীর দিনলিপি। কিন্তু মাঝে মাঝেই এসে গেছে অজানা কোনো তৃতীয় ব্যক্তির বৈদগ্ধপূর্ণ, কাব্যিক হ্যালুসিনেশান, যা সময়ে সময়ে পৃথিবীর হিংস্রতার দিনলিপি পড়তে পড়তে ‘comic relief’এর ভূমিকা পালন করেছে।  
“সম্পূর্ণ শরীর একখন্ড বরফ যেন। রক্তের দোষ কি? হাতিয়ারওয়ালার সামনে আমি অসহায়।’’ উপন্যাসের শুরুতে উদ্ধৃত বাক্যবন্ধত্রয় আখ্যানের অভিমুখ নির্দেশ করে। বদ্ধভূমি, চোখের সামনে হাতিয়ারওয়ালা কবর খুঁড়ে চলেছে। ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময় পরিবেশ। “আদিগন্ত কবর শুধু। দেখা যায় না কোনো মানুষ। কবরে কবরে মানুষ ঠাই নিয়েছে, রোদের আলোয় হাতিয়ার চমকায়।” হাতিয়ারওয়ালার হাতিয়ারের বিপক্ষে জনমানুষের অস্তিত্ব প্রহসন মাত্র। প্রসঙ্গত জীবনানন্দ দাশের ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’ কবিতার “যুদ্ধ আর বাণিজ্যের বেলোয়ারি রৌদ্রের দিন / শেষ হয়ে গেছে সব ; বিনুনিতে নরকের নির্বচন মেঘ, /পায়ের ভঙ্গির নিচে বৃশ্চিক – কর্কট-তুলা-মীন” পাশাপাশি   T.S এলিয়টের ‘Wasteland’ কবিতার “April is the crue
 month , breeding/ Liacs out of the dead land/  mixing Memory and desire, stirring/ Dull roots with spring rain.” পঙ্কতিগুলি মনে দোলা দেয়। 
অস্ত্বিত্বের তাড়না বনাম মনুষ্যত্ববিরোধী আধিপত্যের প্রধান সঙ্গী হাতিয়ার:  
সৃষ্টির আদি লগ্নে আদিম মানুষ আত্মরক্ষার তাগিদে গাছের ডাল এবং পরবর্তী সময়ে পাথরের সাহায্যে হাতিয়ার প্রস্তুত করে, অস্তিত্বের তাড়নায় অন্যান্য প্রাণীদের তুলনায় এক কদম এগিয়ে গেছে। মানুষের উদবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ‘হাতিয়ার’ও কালের নিয়মে বিবর্তিত হয়েছে এবং সময়ের নিরিখে ‘হাতিয়ারওয়ালা’রূপে, মনুষ্য চরিত্রে বিরাট রদবদল। প্রতিযোগিতা, শ্রেষ্ঠত্বের অভিযাত্রায় আর্য-অনার্য দ্বন্দ্ব, সমুদ্র যাত্রা-লুন্ঠন, দাসপ্রথা, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় মানুষের আধিপত্য স্থাপনের প্রধান সঙ্গী এই হাতিয়ার। পরিযায়ী মানুষ শুধুমাত্র তার ভাষা, খাদ্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য নিয়েই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় নি, সাথে নিয়ে গেছে অস্ত্র আর ধাতু বিদ্যা। হাতিয়ারের বিবর্তনে গাছের ডাল, পাথরের টুকরো, তীর-ধনুক,  রাজ-রাজাদের সাধের তলোয়ার, বর্শা-বল্লম থেকে আজকের আধুনিক যান্ত্রিক মানুষের পারমাণবিক বোমা। হিরোশিমা-নাগাসাকির  দানবীয় ধ্বংসলীলার দুঃস্বপ্ন আজও পৃথিবীবাসীর স্মৃতির কোঠায় জাগরূক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাগদাদের এক হাসপাতালে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের লোহিত রক্তকণিকায় বাসা বেঁধেছে রাসায়নিক-জৈবযুদ্ধের মালমশলা এবং তা সংক্রামিত হবে আরও কয়েক প্রজন্মের লোহিত কোণিকায়। যুগে-যুগে, কালে-কালে মানুষের হাতিয়ারের সূক্ষ্মতা তার আদিমতম হিংস্রতার পরিচায়ক। হাতিয়ার বিবর্তনের ধারাক্রম বিশ্লেষণে মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতি, নৃতত্ত্ব, সামাজিক-অর্থনৈতিক ইতিহাস পাঠককে নতুন discourse-এর সামনে হাজির করে। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বিভাষ রায়চৌধুরীর ‘অস্ত্র: প্রাচীন থেকে আধুনিক’ গ্রন্থটি ভারত ভূখন্ডের ইতিহাসে অস্ত্রের উদ্ভব, তার বিবর্তন, বৈদেশিক প্রভাব, বিজ্ঞান এবং ধাতুবিদ্যা সমন্বিত জটিল অস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সমীকরণে আলোকিত।  ভিয়েতনাম-আমেরিকা যুদ্ধে capitalist আমেরিকা ভিয়েতনামবাসীর স্বাধীনতার কন্ঠস্বর চিরতরে রুদ্ধ করার প্রয়াসে সৃষ্ট যান্ত্রিক মানব ‘সোলো’র নিকারাগুয়ার আদিবাসীদের একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হয়ে ওঠার কাহিনী ১৯৮৯ সালে রবার্ট ম্যাসন আকর্ষণীয় ভাবে টানটান উত্তেজনায় ‘ওয়েপন’ উপন্যাসে পরিবেশন করেছেন। আর ধর্ষণ, পুরুষাঙ্গ তো যুদ্ধের বাজারে পুরুষের টান টান উত্তেজনাময় হাতিয়ার। যুদ্ধকালে বালিকা তরুণী থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা সকলেই শিশ্ন বিদ্ধ হয়। ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান বলছে পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানী উর্দুপন্থী রাজাকার বাহিনীর ধর্ষণের পাশবিকতা, নৃশংসতা এ যাবৎকালে পৃথিবীর ইতিহাসে সংগঠিত সকল যৌন নির্যাতনের শীর্ষে।  
                            ঔপনিবেশিকতা ও বিপ্রতীপে হাতিয়ার: 
বসুন্ধরা বীরভোগ্যা। সুপ্রাচীন কাল থেকে ‘ওদের’ঘাম নিংড়ানো শ্রমের বিনিময়ে  রাজ-রাজাদের আকাশ ছোঁয়া বিলাসপুরী। বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে সীতানাথ-শরদিন্দুর কথোপকথনে “না। তুমি কিছু করতে পারো না। আমি কিছু করতে পারিনি। কারো কিছু করবার নেই। নির্যাতন, হত্যা, দাঙ্গা – সব কিছু চলবে, সব কিছু মানুষই করবে- তবু মানুষের কিছু করবার নেই। যে মানুষ শান্তিতে দু বেলা খেতে পেলে খুশি, সেই অন্য মানুষের পেটে বেয়নেট গুঁজে দেবে। যে বৈজ্ঞানিক একটা জন্তুর যন্ত্রণা চোখে দেখতে পারে না, সেই একসঙ্গে লক্ষ মানুষ ধ্বংসের অস্ত্র তৈরি করবে। এরা সবাই মানুষ। তোমার মতো। আমার মতো। এরা সবাই জীবনের এক একটা অর্থ খুঁজে নিয়ে বাঁচবার চেষ্টা করছে।’’ জীবনের বৈচিত্র্য অন্বেষণে উৎসুক কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার, ভাস্কো-দা-গামার ১৪৯৮ সালে কালিকট বন্দরে আগমন, ১৬০০ সালে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা এবং বাণিজ্যের গর্ভেই ঔপনিবেশিকতার জন্ম। উনিশ-বিশ শতক ঔপনিবেশিকতার রমরমা সময়। 
 ঔপনিবেশিকতা-সাম্রাজ্যবাদ-নির্লজ্জ্ব লুন্ঠন, মানবাধিকারের পদলেহন যখন গগনচুম্বি রূপ ধারণ করে, তখন স্তূপীকৃত পাপের অচলায়তনে আঘাত হানবার জন্যই ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব, ১৯১৯ সালে রুশ বিপ্লবে সাম্যতার প্রতিষ্ঠায় আমজনতার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। চে-গুয়েভারাই আমাদের প্রথম “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক” শিখিয়েছেন।  “চে গুয়েভারা, যিনি  মাও-জে-দং আর গিয়েপের পর গেরিলা যুদ্ধের আর এক বড় প্রবক্তা লিও ট্রটস্কির চেয়েও পৃথিবীর সবচেয়ে রোম্যান্টিক বিপ্লবী বলে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেরিলা কায়দায় বিপ্লবের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য জীবন বাজি ধরেছিলেন। আজও চে অম্লান।” গুম করা-গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষ চে-গুয়েভারা, বাংলাদেশের বিপ্লবী সংগঠনের সিরাজ সিকদার কিংবা নকশাল চারু মজুমদারের গলার স্বর চিরজীবনের মত থামিয়ে দিতে চেয়েছে এবং শেষমেশ সফলও হয়েছে। ১৯৬৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর লগুয়েন লগক লন সায়গনের রাস্তায় ভিয়েতনাম মুক্তিফৌজের যুদ্ধবন্দী ক্যাপ্টেন নগুয়ান ভান লেমকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় গুলি করে। ক্যাপ্টেন ভান লেম যেন বিড়বিড় করে বলে চলেছে “আয় ছেলেরা আয় ফুল তুলতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই।’’ ঔপন্যাসিক ফ্ল্যাশব্যাকে ধরণীর হত্যায় উন্মত্ত দিনলিপির রক্তাক্ত স্মৃতিযাপন করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে কারবালার প্রান্তরে মুয়াবিয়া-এজিদের পাশবিক ষড়যন্ত্র এবং দুনিয়ার মায়ামোহ ত্যাগ করবার কালে হোসেনের নিঃস্বার্থপরতা-ত্যাগ-ধর্মবোধ স্থাপনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পৃথিবীবাসীর চির পূজনীয়। অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মবোধ সংস্থাপনে পিতা যীশু, কারবালা প্রান্তরে হাসান এবং R.S.S- নেতা নাথুরাম গডসের গুলির আঘাতে মৃত্যু মুখে পতিত গান্ধিজী, তাঁরা তাঁদের নীরব অহিংসার মাহাত্ম্যে হিংস্রতার অচলায়তন ধ্বসিয়ে দিতে পেরেছিলেন। ‘মুক্তধারা’র ধনঞ্জয় বৈরাগী হাসতে হাসতে বলতে পারেন “আমি মারের দ্বারা মারকে জয়ের চেষ্টা করি না, আমি মারকে ছাড়াইয়া উঠিয়া মারকে জয় করি।” 
     জেনোসাইড: জনগণের শরীরে রাষ্ট্রিয় আধিপত্য, দূর্ভিক্ষ ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান: 
‘জেনোসাইড’ শব্দটিকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটির কাহিনী বিবর্তিত হয়েছে। ‘জেনোসাইড’ শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ ‘গণহত্যা’। ১৯৪০-এর দশকে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুদ্ধাংদেহি, রণরক্তপ্লাবিত পৃথিবীর জনগণের মুখে  Raphael Lemkin উক্ত শব্দটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। উন্নয়ন-জেনোসাইড স্টাডিজে অধ্যয়নের দরুণ ঔপ্যনাসিক ‘জেনোসাইড’ বিষয়টির  বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রদান করে  অজ্ঞাত পাঠককে সমৃদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ- আন্দোলন-বিপ্লবের সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গণহত্যা প্রতক্ষ্য জেনোসাইড এবং ‘দূর্ভিক্ষ-মহামারি’ তাঁর মতে অপ্রতক্ষ্য জেনোসাইডের আওতাভুক্ত। মধুশ্রী মুখার্জীর ‘চার্চিলস সিক্রেট ওয়ার’ গ্রন্থ পাঠে পাঠক মাত্র  পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো অপ্রত্যক্ষ জেনোসাইড ‘তেতাল্লিশের মন্বন্তর’-এ ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রীর কূটনৈতিক ভয়াবহতার সঙ্গে পরিচিত হয়। পুনরায় ফ্ল্যাশব্যাকে সংবাদপত্রে মৃত্যুর মিছিল। 
                    “কলকাতার উপর মন্বন্তরের ছায়া পড়িয়াছে। হাজার হাজার কঙ্কালসার বুভুক্ষু মানুষের আর্তনাদে কলিকাতার বাতাস ভারি হইয়া উঠিয়াছে। পশুর মতো মানুষ মরিতেছে।চারিদিকে শুধু হতাশ আর বিলাপ।” (জনযুদ্ধ, ৮ই সেপ্টম্বর ১৯৪৩)     
ঔপ্যনাসিক সচেতনভাবে ‘Biological imperialism’ শব্দটির প্রয়োগ ঘটান। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার ‘biological imperialism’ বা ‘জৈবিক সাম্রাজ্যবাদ’। ‘শরীর, সমাজ ও রাষ্ট্র: ঔপনিবেশিক ভারতে মহামারি ও জনসংস্কৃতি’ প্রবন্ধে দীপেশ চক্রবর্তী বিশ্লেষণ করেছেন “রাষ্ট্র সামাজিক বন্ধনকে আত্মসাৎ, দমন বা  শিথিল করে নাগরিকদের উপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। … ‘শান্তি বজায় রাখা’ বা ‘আইন-শৃঙ্খলা’ রক্ষা করা, ‘আর্থিক উন্নতি’ ও ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা রাষ্ট্রব্যবস্থার মুখ্য কর্তব্য বলে ধরা হয়। এগুলো যেমন রাষ্ট্রের কর্তব্য তেমনি রাষ্ট্রের মতাদর্শগত হাতিয়ারও বটে।” দীপেশ চক্রবর্তী মনে করেছেন  ‘আধুনিক শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞান ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য নীতি’ আধুনিক রাষ্ট্রের শক্তিশালী হাতিয়ার। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সম্পর্ক কতখানি বলবতী তা সর্বপ্রথম ইংরেজরা এ-দেশে উপনিবেশ স্থাপন করে প্রমাণ করে। কারণ শ্বেতাঙ্গপ্রভুরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশে উপনিবেশ স্থাপন করার তাগিদে ভারতবর্ষের চিকিৎসাব্যবস্থাকে ঠেলে সাজায়। বিশেষত কোম্পানির রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্যের প্রশ্নটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল এবং কোম্পানির প্রথম দায়িত্বই ছিল ভারতবর্ষের চাকুরিরত ইংরেজ অফিসার ও সৈন্যদের এখনকার ‘দূষিত’ আবহাওয়া ও জায়গা থেকে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে রাখা। পাগল-পাগলাগারদের ধারণা ইংরেজরাই অবিভক্ত ভারতবর্ষে আমদানি করে।  দীপেশ চক্রবর্তী তাঁর আলোচ্য প্রবন্ধে মানুষের শরীরের উপর রাষ্ট্রের জোরদার আধিপত্যের দিকটি চিহ্নিত করেছেন। ঔপনিবেশিক ইংরেজ  শাসক তার রাষ্ট্রিক কর্তব্য পালনে পাগলদের জন্য পাগলাগারদ নির্মাণ করে। শাসক পাগল হবার কারণ হিসেবে বঙ্গের আবহাওয়া ও বঙ্গবাসীর ইতরতাকে দায়ী করলেও, প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নৌবাহিনী-সেনাবাহিনীর লোকজনের উন্মাদনাগারে ঠাঁই হতো। প্রতক্ষ্যভাবে একটা রাষ্টের স্বার্থের যূপকাষ্ঠে  নৌবাহিনী-সেনাবাহিনীর নিরীহ মানুষদের আত্মবলিদান একান্ত প্রয়োজন। ১৯৬১ সালে মিশেল ফুঁকো তাঁর ‘Madness and Civilization’: A history of insanity in the age of Reason’ গ্রন্থে, মানসিক হাসপাতাল বা উন্মাদনাগারকে পুঁজিবাদের অণুবিশ্ব হিসেবে কল্পনা করেছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উইলিয়াম টিউক এবং ফিলিপ পিনেল যথাক্রমে ব্রিটেনের ‘ইয়ার্ক রিট্রিট’ ফ্রান্সের ‘বিৎসের’ উন্মাদনাগারের দরজা সর্বসমুক্ষে খুলে দেন।  কিন্তু এই মহানুভবতার বিষয়টিকে উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে ফুঁকো বিষয়টির অভ্যান্তরে পুঁজিপতি সমাজের চক্রান্ত লক্ষ্য করেছেন। পুঁজিবাদের যুগে নতুন শিল্পোদ্যোগের স্বার্থে ব্যাপক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে পুঁজিপতিরা উন্মাদব্যক্তিদের সুস্থ করে রাষ্ট্রের উৎপাদনযন্ত্রের ঘানিতে তেল নিংড়ে নেবার জন্য। ঔপ্যনাসিক একবিংশ শতাব্দীতে ‘biological imperialism’-এর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত ডাক্তারদের চিহ্নিত করেছেন।  “চিকিৎসকেরাও হাতিয়ারওয়ালার মতো। ওদেরও রয়েছে নানা প্রকার যন্ত্র ও মৃত্যুর সনদপত্র লেখার ক্ষমতা। … চিকিৎসক ও কসাই, কসাই ও হাতিয়ারওয়ালা, চিকিৎসক ও হাতিয়ারওয়ালা সবই মিলেমিশে বুদবুদ তোলে আমার ভিতর।” 
  একাত্তরের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনোত্তর বাংলাদেশের পরবর্তী এক দশকের রক্তস্নাত দিনলিপি: 
হ্যালুসিনেশান, হঠাৎ করে ২০১১ সালের জানুয়ারী নয়, সময়টা পিছিয়ে চলে গেছে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী ১ তারিখে, পূর্ব বাংলার ‘সর্বহারা পার্টি’র আত্মগোপনকারী সিরাজ সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই দিন। “সিরাজ সিকদারকে হত্যা… বাংলার ক্রসফায়ারের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।“ সকল বিপ্লববিলাসীর একই পরিণতি, সে চেগুয়েভারা হোক বা চারু মজুমদার। দেশ ভাগের পর নিরীহ-শান্তিপ্রিয় পূর্ব বাংলার বাঙালির উর্দুপন্থী ঔপনিবেশিক পাকিস্থানের আধিপত্যে লাঞ্ছিত, পদদলিত, বিষাক্ত দিনযাপন। ১৯৭১ সাল থেকে পরবর্তী ১৯৮১ বাংলাদেশের রক্তাক্ত দিনলিপি। বাংলাদেশের দুর্জয় সাহস-সংগ্রামের প্রতীক শেখ মুজিব, যিনি ব্যক্তি মুজিবকে অতিক্রম করে গেছেন। এরপর কত মৃত্যু, একেকটি নক্ষত্রপতন, মৃত্যুর নামতা পড়তে পড়তে রক্তায়নের আনুপূর্বিক বিস্তার। ৭০-এর দশক রক্তাক্ত দশক, ওপার বাংলার ‘আজাদি’র মরণপণ লড়াই অন্যদিকে এপার বাংলার তরুণতুর্কি নকশালদের দেশবদলের স্বপ্ন। কিন্তু নবীন নকশালদের দেশবদলের স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবতার ধুলোমাটির কাঠিন্যে বিলীন হয়ে যায়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের রক্ত স্নাত একুশে ফেব্রুয়ারীর ফলশ্রুতি মেরুদন্ডভাঙ্গা, ধর্ষিত অথচ কাঙ্খিত স্বাধীনতা। অবশেষে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আসলো সেই স্বাধীনতা। স্বাধীনতা তো রক্তমাখা লাল শাড়িতে ধীর-নত পদে, ম্লান মুখে অসহায় কূলবধূটির মতো ধরা দিল। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে ছেলেটি পোস্টার লিখত, সেই ছেলেটি ভিড়ে হারিয়ে গেছে। লাল টুকটুকে বউটি বাসর রাতের পর তার সামর্থ পুরুষ মানুষটিকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল, দিন গড়িয়েছে, বছর গড়িয়েছে তবুও ফিরে আসেনি তার জোয়ান পুরুষটি। তদসত্ত্বেও শান্ত হয়নি রক্তচোষা, উর্দুপন্থী ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমানদের রক্তপিপাসা।  অচিরেই শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের উপর ধেয়ে আসে ষড়যন্ত্রকারীদের করাল থাবা, অতর্কিত আক্রমণে পরিবার সহযোগে মুজিবের মৃত্যু। ক্রমে শাসনতান্ত্রিক জটিলতা, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে জুয়াখেলার আসরে মেতে ওঠেন রাজনৈতিক নেতৃত্বগণ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জিয়ার আদেশে মুশতাকের পুতুল প্রেসিডেন্ট হওয়া, ১৯৭৬ সালের মার্চে ফারুক-রশীদের জিয়াকে উৎখাত করার জন্য ঢাকায় হাতিয়ার ধরে বসেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষে  ১৮৫৭ সালের গণভ্যুর্থানের ১১৮ বছর পর বিশৃঙ্খল, রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সাধারণ সৈনিকেরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কর্ণেল তাহের ১৯১৯ সালে বলশেভিক বিপ্লবের ব্যর্থ অনুকরণ করেছিলেন। নিজেকে ফিদেল কাস্ত্রো ভাবা কর্ণেল তাহের চে গুয়েভারার মতো স্বাপ্নিক, নির্ভীক, রোমান্টিক বিপ্লবী। তাহেরের মৃত্যুদন্ড স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ফাঁসি। বিপ্লবীর শহিদ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে ২১ বার সেনা অভ্যুর্থান সংঘটিত হয়। জিয়া দায়িত্ব সহকারে মুজিব হত্যাকারী মেজর ও তাদের স্ত্রীদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।  অতঃপর জিয়ার আদেশে বাংলাদেশে মৃত্যু রোল, একেক রাতে ৩০, ৪০ অথবা ৫০ জনের ফাঁসি, এ এক নরমেধ যজ্ঞ। নাজীদের ইহুদি হত্যা জিয়ার অপরেশনের কাছে ম্লান হয়ে যায়। জাতির জীবনে অভিশাপ নেমে আসে।  পাপ বাপকে ছাড়ে না, প্রবাদটিকে সপ্রমাণ করবার জন্য চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কিছুজন মেজরের আক্রমণ এবং গুলির আঘাতে জিয়ার মৃত্যু (১৯৮১, ৩০শে মে)। জিয়া হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ১৯৮১-এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। 
‘অসির চেয়ে মসি বড়ো’ প্রবাদবাক্য সপ্রমাণে নাছোড়বান্দা কলাকুশলীগণ: 
 চারদিকে অনাচার, হাহাকার, রক্ত ও অশ্রু নিরবধি। পঞ্চাশের মন্বন্তরে পেটের দায়ে মা তার কোলের শিশুটিকে বিক্রী করে দিয়েছে। কলকাতায় ফুটপাত যখন দুর্যোগের আশ্রয়দাত্রী হয়ে ওঠে, তখন ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে তার ফুটপাতে মৃত্যু মিছিল। “চারিদিকে থাকত মড়া। পচা গন্ধ। শকুন-কুকুর-শেয়ালের উৎপাত। জ্যান্ত লোককে পশু-প্রাণীরা মরা ভেবে খেতে আসত।” মানুষ ঈশ্বরের উপর ভরসা হারাতে বসেছে। চারিদিকে ‘বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে’। সেই সময় কিছু হাতিয়ারওয়ালা শাসকের পা চাঁটা কুকুর শিল্পের নামে সাহিত্যে নর-নারীর কেলিবিলাসে মগ্ন হয়েছিল। ৮০-এর দশকে মহাশ্বেতা দেবী তাঁর ‘অগ্নিগর্ভ’ গ্রন্থের ভূমিকাংশে বাঙালি সাহিত্যিকদের বাস্তববিমুখতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছেন “শহুরে সচ্ছল মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের ভাড়াটেরা সাহিত্যের নামে আপন-আপন আত্মানুশীলনে রত। … বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘকাল বিবেকহীন বাস্তব-বিমুখিতার সাধনা চলছে। লেখকেরা দেওয়ালের লেখা দেখেও দেখছেন না, বহু সমস্যা, বহু অবিচার, বহু জাতি, বহু লোকাচার সংবলিত দেশের লেখকরা লেখার উপাদান দেশ ও মানুষ থেকে পান না, এর চেয়ে বিস্ময়কর কি হতে পারে?”  গণ-উদ্যোগে ভিয়েতনাম যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনালে দেয়া জঁ-পল-সার্ত্র(Jean-Paul Satre)-এর ভাষণটা নড়বড়ে ক্যাসেটটা লাথির অভাবে বন্ধ হবার আগে শোনাচ্ছে- “ধানক্ষেতে যখন কোনো কৃষক মেশিনগানের গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে, তখন আমারা আহত হই। ভিয়েতনামিরা লড়ছে সমগ্র মানবজাতির জন্য। আর আমেরিকা লড়ছে ভিয়েতনামিদের বিরুদ্ধে। যারা আমেরিকার অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে না, তারা সেই অপরাধের সাগরেদ। আর এইভাবে এক ক্রীতদাস জীবনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য বব ডিলান, রবি শঙ্কর, জর্জ হ্যারিসন রাস্তায় নেমে গান গাইছেন। হাংরি আন্দোলনের কবি গীন্সবার্গ লিখলেন ‘যশোহর রোড’ কবিতা –
              – “শত শত চোখ আকাশটা দেখে/ শত শত মানুষের দল
                 যশোহর রোডের দুধারে বসত/ বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল। 
                  ………………………………………………………………………………
                 ঘরহীন ওরা চোখে ঘুম নেই চোখে/ যুদ্ধে ছিন্ন ঘরবাড়ি দেশ
                 মাথার ভিতর বোমারু বিমান/ এই কালো রাত কবে শেষ
                 শত শত মুখ, হায় একাত্তর/ যশোর রোড যে কত কথা বলে।”    
এই তো সে দিন মৌসুমী ভৌমিক পথে নেমে গান গেয়ে গেলেন। বব ডিলান, জর্জ হ্যারিসন তাঁদের কনসার্টের টাকা বাংলাদেশের শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে দান করে গেলেন। কিন্তু তাতে কি হল? শাসকের মন বদল কি কার্যত সম্ভব? কিন্তু তাঁরা পুনরায় ‘art for mansake’ এবং ‘অসির চেয়ে মসি বড়’ আপ্তবাক্যটিকে প্রমাণ করলেন। তাঁরা শিল্পকে গণজাগরণের স্তরে নিয়ে আসলেন। ১৯১৫-এর মায়াকোভস্কি, সেনাবাহিনীতে যেতে চান না বলে তিনি ভান করেন যে তিনি ছবি আঁকিয়ে। সেই মায়াকোভস্কি বলছেন “শিল্পে চাতুরী, নিছক নান্দনিকতা, ভুয়ো মনস্তাত্ত্বিকতার বিরুদ্ধোচারণ আর প্রচারমূলক (উত্তেজনামূলক) উঁচুমানের পেশাদারি সাংবাদিকতা ও প্রামাণিক লেখা তুলে ধরা ‘লেফ’ কাগজটার মূল উদ্দেশ্য।’’ 

যবনিকাপতন নাকি প্রশ্নবিদ্ধ পাঠকের অন্য কোনো উত্তর অনুসন্ধানের শুরুয়াত: 
 ঔপন্যাসিকের কথন বিশ্বে হত্যা-যুদ্ধোন্মত্ততা, নারকীয় হত্যাকান্ড, হাতিয়ারওয়ালাদের দাপাদাপি, জেনোসাইডের তাৎপর্য ও তার শ্রেণিবিভাগ, আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায়ন, সদ্য স্বাধীনপ্রাপ্ত বাংলাদেশের পাশবিক পরিণতি, দায়িত্ববান  বিশ্বমানব হিসেবে কলাকুশলীদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় বিচ্ছিন্নভাবে উপন্যাসের পাতায় পাতায় ইস্তেহার রচনা করেছে। ঔপন্যাসিক হাতিয়ারওয়ালাদের হাতিয়ারের রক্তের জলছাপের পাশাপাশি ‘বিপ্লবকরনেওয়ালা’ বিপ্লববিলাসী নেতৃত্বদের জননায়কত্বের তকমায় ভূষিত করেছেন। অন্যদিকে উপন্যাসের  আখ্যান তার রোম্যান্টিক কল্পনাবিলাসকে ছাপিয়ে social science-এর দিকে তার অভিমুখ নির্দেশ করেছে। প্রচলিত আখ্যান রচনার ঐতিহ্যকে ঝেড়ে ফেলে কেতাদুরস্ত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, মাথার চারপাশে ভোঁ ভোঁ করে বোলতা ঘোরার মতো একটাই প্রশ্ন ঘোরে উপন্যাসের কোন চিরাচরিত শ্রেণির পাতে উঠে আসবেন আমাদের ‘হাতিয়ারওয়ালা’? রাজনৈতিক না ঐতিহাসিক নাকি অ্যাবসার্ড কোনো উপন্যাস রচনার শুরুয়াত হবে ‘হাতিয়ারওয়ালা’কে দিয়ে। এই History থেকে Story-এর দিকে যার যাত্রাপথ, পাঠকমাত্রই বুকে রক্তের ঝড় নিয়ে প্রশ্নটির উত্তর অনুসন্ধান করে, প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয় অন্তরাত্মা।

মানুষ বনাম‘হাতিয়ারওয়ালা’: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়পর্বে ধর্ষিত অথচ বন্ধ্যা পৃথিবীর রক্তায়নের ডায়েরী
মারিয়ম ফেরদৌসী 

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ সংখ্যা : মারিয়ম ফেরদৌসী
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ সংখ্যা : মারিয়ম ফেরদৌসী
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s16000/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s72-c/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2023/11/mariam-ferdawsi-article-on-syed-riazur-rashid.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2023/11/mariam-ferdawsi-article-on-syed-riazur-rashid.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy