.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

মানবিক পাশবিক │ছোটগল্প│ সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ

আমার ভিতরে একটা পশু ঘাপটি মেরে বসবাস করে যাচ্ছে এই বিষয়টা আমি বয়স বাড়ার পর ঠিকঠাক মতো বুঝে উঠতে সক্ষম হই। আমার এই উপলব্ধিতে কোনোরকম ভুল নাই। একটি দ্বিতীয় সত্তা হিসাবে আমারমূল সত্তার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে এই পশুটা দিব্যি বহাল আছে।
আমার ভিতর একটা পশু আছে। এই পশুটা আমার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। কিন্তু কখন যে হালুম করে বেরিয়ে আসে তা আমি ঘটে যাওয়ার আগে ঘুণাক্ষরেও টের পাই না। পশুটা যখন দাঁত নখ নিয়ে বেরিয়ে আসে তখন আমি ভয় না পেলেও সংস্পর্শে যারা থাকে ভয়ে সিটিয়ে যায়। পশুটা উন্মোচিত হলে তখন আর আমি একদম মানুষ থাকি না। একদম পশু হয়ে যাই আমি। সেই সময়ে আমি আয়নাতে নিজের মুখ কখনো দেখি নাই। আয়নায় নিজেকে দেখলে বুঝতে পারতাম তখন আমার চেহারা কেমন আকার ধারণ করে। তখন আমার ক্লীন শেভড মসৃণ গাল কী শোভা পায় ? চুলের সিঁথি কী ঠিকঠাক থাকে ? এলোমেলো হয়ে যায় না তো আমার কেতাদুরস্ত পোশাক ও চুল ? আমি একটা মদো মাতালের মত আচরণ প্রকাশ করি নাতো ?
আমার মধ্যে সুপ্ত পশুটা না জেগে উঠলে কোনো রকম হেরফের হয় না। আমি খুব সুন্দর করে হাসি দিতে পারি। চমৎকার করে কথা বলে যেতে পারি। আমার হাবভাবের মধ্যে এমন একটা দস্তুর চেহারা দেখা যায় যে, তা দেশে আমার চতুস্পার্শের যাবতীয় সভ্য সমাজ একবাক্যে তারিফ করে যায়। এমন সোনার টুকরা কেউ একজন হয় না বলে সকলের কাছে প্রতিভাত হয়। তখন আমি একজন সুন্দর মানুষের মতো সকলের মন জয় করি।
আর যখন পশুটা আমার উপর চড়ে বসে তখন তাদের কাছে আমার যে সুন্দর পরিচ্ছন্ন মূর্তিটা আকর্ষণ করে তা তখন আর অবশিষ্ট থাকে না বিন্দুমাত্র।
 ভিতরেরআবাসিক পশুটাকে ঘৃণা করি কিন্তু ঐ পশুটা আমাকে বহুৎ আদর করে। আমার সঙ্গে মাখামাখি করে বাস করে। পশুটাকে আমার মধ্য থেকে আমি দূর করে ফেলতে চাই কিন্তু পশুটা নাছোড়বান্দা। একটা ভূতের মতো পশুটা আমার ঘাড়ে দিব্যি বসে। পশুটা আমার মধ্যে নিশ্চিন্তে  ঘুমিয়ে থাকে। পশুটা আমার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গি হয়ে গেছে। পশুটা আমার সঙ্গে প্রেমের মতো জড়িয়ে থাকে।
পশুটা যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে কী রকম হতো তা আমি বুঝকে পারি না। পশুটা আমাকে ত্যাগ করলে আমি বোধ হয় আমার মতো হতাম না। একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতাম না। পশুটা আমাকে পরিত্যাগ করলে আমি নিজেই এমন একটা পশু হয়ে পড়তাম যে পশুটার মধ্যে তখন উল্টো এক মানুষ বাস করত। সেই মানুষটা পশুটার ভিতর ঝিম মেরে পড়ে থাকত।
পশুর মতো আমি হিংস্র থাবায় সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে ফেলতাম। এইসময় হয়তো মানুষটা সক্রিয় হয়ে উঠে যারপরনাই দুর্দমনীয় সেই পশুটাকে ভারসাম্য আনত।
পশু আর মানুষ মিলেমিশে থাকে না। একবার পশু চাড়া দিয়ে ওঠে আবার মানুষটা ধড়মড় করে জেগে উঠে পশুটাকে সামলায় নিত। পশু ও মানুষের একটা খামখেয়ালি খেলা চলতে থাকত। পশুর ভিতর একটা মানুষ গান গায় আর মানুষের মধ্যে পশু গর্জন করে নিজ নিজ হদিস জানাতে থাকে।
পশু আর মানুষ একে অপরের ভিতর দিব্যি অবস্থান করে। ইচ্ছেমতো খামখেয়ালি খুশিমতো যেমন তেমন যখন তখন স্বমহিমায় দেখা দেয়।
পশুটা বুড়া আঙুল দেখিয়ে মানুষটার উপর জেঁকে বসে আবার মানুষটা সময় মতো চড়াও পশুর উপর। মানুষ আর পশু এই যে হাত ধরে চলে পরস্পর– উভয়ই হচ্ছে এক ধরনের নরম, বিপজ্জনক, স্বপ্নালু, জ্যান্ত, মরা, স্বচ্ছ, কুয়াশাময়, তপ্ত, হিংস্র, আচমকা, আঁধার, পড়ন্ত, সোজা, তেরছা, কামঘন, গুমোট, সীমিত, বিষাক্ত, শুশ্রূষাবৎ।
পালিত পশু আর বহাল মানুষ এই দুই নিয়ে আমার ঘর গেরস্থি। আলো-আঁধারির মতো খেলা চলে। একজন হচ্ছে আলো আর অন্যটা অন্ধকার। আলো ও অন্ধকারের এই যুগলবন্দি দীর্ঘকাল যাবত যাপন করে যাচ্ছে। ক্লান্তিহীন। বিরামহীন। সীমাহীন। দীর্ঘদিন। কেউ কাউকে কখনো পরাস্ত করতে পারে না। একজনের জিৎ হলেও তা বিচার করে রায় দেয়ার মতো কেউ নেই। বোবা একধরনের বিব্রতবোধ প্রকাশিত থাকে বলে বিচারের ফল জানা হয় না।
মানুষ আর পশুটা একে অপরের হয়ে দিব্যি চড়িয়ে বেড়ায়।
অ-তে অজগর আসলো তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে। এই হচ্ছে পশুর স্বরূপ। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি। মানুষ আমি তখন।
কিন্তু এই দ্যোতনায় চিড় যখন খায়, একটা আরেকটার উপর যে সময়ে আসীন হয় তখন সব অপ ও মন্ত্র, ধ্বনি ও নিশ্বাস, বিশ্বাস ও চিন্তা একাকার হয়ে যায়।
আমি পশুকে যেমন ঘৃণা করি, থুতু মারি তেমনি পশু আমাকে দেখে দাঁত বের করে কেলায়।
পতাকা আকাশে মহাউল্লাসে উড়তে থাকে। বিউগল বাজে। ড্রামের তালে কুজকাওয়াজ করে চলে। লেফট-রাইট, লেফট-রাইট, লেফট...এটেনশন।
ভূতুরে একটা ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। ভূতঘুমের ভেতর আমি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়া অবস্থায় শুধুমাত্র মুধমন্ডল বের করে দানবের মত নাক ডাকতে ডাকতে ঘুমিয়েছি।
ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে নিজেকে টেনে বের করে আমি টালমাটালভাবে উঠে দাঁড়াই।

শরীর থেকে, রক্তের একক হতে পানি সরে গিয়ে জায়গা দখল করেছে এ্যালকোহলের ঝাঁঝ। এ্যালকোহল আরো দরকার। এই সকালে ধ্বংসস্তূপের বাইরে উপস্হিত আমার বিছানার পাশে জরিনা সুন্দরী। আমি হাত বাড়াই ভদকার বোতলের দিকে। ছিপি খুলি। ভদকার খুশবু এসে মনটা ভিজিয়ে দেয়।
টেবিলের উপর উলটানো গ্লাস গতরাতের পানবিলাসের স্বাক্ষী। বোতলের অবশিষ্টাংশ মদিরা ঢকঢক করে গেলাসের মধ্যে উপুর করে দেই। একদম কাঁচা ভদকা। গেলাশটা ঠোঁটের কাছে ধরি।
যারা মদ্যপানে একনিষ্ট হয়, মদ খেলে যাদের চিত্ত বিকার হয় না, –তারাই মদ্যপানের অধিকারী।

কোথায় আমি বলেছি যে সবার তরে মদ হারাম জ্ঞানীর তরে অমৃত এ, বোকার তরে উহাই বিষ।

নেশা সাধনার সহায়ক। একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা জন্মায় তাতে। মাদক কুচিন্তার অনুপ্রবেশ রোধ করে।
অতঃপর কাঁচা ভদকা  গলা দিয়ে শরীরে বহমান যে রক্তধারা তার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার জন্য কাঙালের মতো ঘটঘট করে মেরে দিতে সময় লাগে ১১ সেকেণ্ড।
নির্জলা ভদকা উল্লাস করতে করতে গলা বেয়ে নেমে যায় এবং শ্লোগান দিতে দিতে শরীরের ভেতরে ঢোকার সময় যে অংশসমূহ অতিক্রম করে সেইসব জায়গায় একেকটা বিস্ফোরণ ঘটে অবিরাম এবং তাতে শরীর নাড়া খায় রীতিমত।

চমকে দিয়ে সেলফোনটা দুম করে বেজে ওঠে। হাত ফোনের রিং টোনটা হচ্ছে মিশ্র ঝিঝিট রাগে অবারিত দ্বিজেন্দ্রলালের অনবদ্য সেই সঙ্গীত−‘আমার দেশ। বঙ্গ আমার। জননী আমার। ধাত্রী আমার। আমার দেশ’− এই করতে করতে রিং টোন বাজে। যে ফোন করেছে তার নাম দেখে কল-রিসিভ করতে ইচ্ছা করল না। ফোন করেছে ঐশী। ও হচ্ছে লেসবিয়ান। ওরে সঙ্গে খামোকা কথা বলে কাজ নাই কারণ ওসব হবে টবে না। একটা কড়া সঙ্গমের সম্ভাবনা থাকলে না হয় ফোনটা ধরা যেত তার চেয়ে বরং এখন নিজেকে মেরামত করে নেয়া যেতে পারে। পরে কলব্যাক করা যাবে।
কিন্তু রিং টোনের ভেতর হতে উৎসারিত গানটা মাথার ভেতর মগজের কোষে ছাপ মেরে দাগ ফেলে খোঁচাখুচি করে এমন জ্বালাতন শুরু করে দিল যে আমি আর কি করি ভদকামন্দ্রিত কণ্ঠে গানটা গাইতে গাইতে বাথরুমে এটাচড টু বেডরুমের দিকে লম্বালম্বা পা ফেলে বায়ুশূন্য মহাশূন্যে বিরাজমান কোনো একপৃষ্ঠের উপর অবতরণের অভিপ্রায়ে যাত্রা করি। কণ্ঠে ঐ সঙ্গীত তো রইল যে,
বঙ্গ আমার। জননী আমার।
ধাত্রী আমার। আমার দেশ,
কেনগো মা তোর শুষ্ক নয়ন,
কেনগো মা তোর রুক্ষ কেশ !
কেনগো মা তোর ধূলায় আসন,
কেনগো মা তোর মলিন বেশ।
সপ্ত কোটি সন্তান যার
ডাকে উচ্চে ‘আমার দেশ’−
কীসের দুঃখ, কীসের দৈন্য,
কীসের লজ্জা, কীসের ক্লেশ।
সপ্তকোটি মিলিত কণ্ঠে
ডাকে যখন ‘আমার দেশ’।…

কাল আমার ছোট বোন রাতের বেলায় টেলিফোন করে আমাকে জানিয়েছে যে, ভাইয়া আম্মা মারা যাচ্ছেন। আমাদের আম্মা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি কোনো কিছু খেতে পারছেন না। নিস্তেজ হয়ে অবিলম্বে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।
বাথরুমের দরজাটা বোধ হয শব্দ করে বন্ধ হলো। প্রবেশের পর ভাঙাচোরা নিজের শরীরটাকে খুঁজে পাওয়া গেল। মনে হলো একটা শরীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ যে প্রকার জিনিসপত্র থাকা দরকার তা রইলেও বহাল তবিয়তে নাই।

মুখের  মধ্যে স্পর্শ করে দেখলাম। দুইটা চোখ আছে তবে একটা উপরে আর একটা নিচে। নাকটা ডানদিকে হেলে গেছে। কানটা ঝুলে গেছে দুই রকম মাপে ও আকারে। ঠোঁট উল্টে আছে। জিহ্বা ভেংচি কাটার মতো ভাব ধরে আছে। দাঁতগুলো সব ই-ই-ই করে আছে। দুইটা পা ছোটো-বড়ো লাগছে। শিশ্ন ও পশ্চাতদেশ আগেপিছে হয়ে গেছে। দুইটা হাতের স্ক্রু আলগা হয়ে গেছে।
ভয় পেয়ে আয়নার সামনে থেকে পিছিয়ে আসি।

শরীরের যাবতীয় চ্যুত-বিচ্যুত অঙ্গ প্রতঙ্গের সমাহারকে যথাযথভাবে সুবিন্যস্ত করে পুনরায় অঙ্গ সংস্থান করে পুনরুদ্ধারকৃত নিজেকে অতপর এই দুঃসময় থেকে বের করে নিয়ে আসি। এতদিনে, এতদিনে বুঝেছে বাঙালি, দেহ তার আজো আছে প্রাণ। আত্মতেজে করি ভর কর্মে হও অগ্রসর। অগ্রসর এবং অতঃপর উপবিষ্ট হয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। বোন বলেছে, আমার আম্মা মারা যাচ্ছেন। মায়ের মৃত্যু সংবাদের জন্য সকাতরে অপেক্ষা করতে থাকি।
পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে না। ক্ষিদা না লাগারই কথা। মা মারা যাবে আমার ক্ষিদা পাবে এখন আর আমি উদরে ডিম-রুটি গপ-গপ করে ঢোকাবো তা না হওয়া খুবই মানবিক।

কাগজ আর কলম টেনে নিই। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের উপর দুই চার লাইন না লিখে পারছি না।
যখনই কোনো নারী ও পুরুষ পরিবারের সদস্যদের দ্বারা শারীরিক বা মানসিকভাবে নিপীড়িত হয়, তখন তাকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বলা হয়।
শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে শারীরিকভাবে জোর খাটিয়ে, মারধর করে, আঘাত করে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হলে, তা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসাবে চিহ্নিত হবে।

শারীরিক আঘাতের ভয় দেখানো, অপমান করা, চিৎকার করে গালাগালি করা, সবার সামনে অপমানজনক মন্তব্য করাও হিংসাত্মক ব্যবহার।

প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে বঞ্চিত করা, কথাবার্তা, চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা, কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেয়া ডোমেস্টিক ভায়েলেন্সের অন্তর্গত।
ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত দেয়া, ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করাও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স।
এই তালিকা আর বড় করে কী লাভ ? কে কাহার ! সব মিলে যাচ্ছে দেখি নিজের সঙ্গে।
লেখা কাগজটা দলা পাকিয়ে পিং পং বলের মতো ছুঁড়ে দেই।
একটা উদ্বেগজনক খবরের কথা মনে আসে। পেটে মাল পড়লে ইদানিং কোথা থেকে সব ভীতিপ্রদ ঘটনা এসে গাড় মেরে বসে।

ভারতে ধর্ষণ মামলায় ন্যায়চিবার সুনিশ্চিত করতে ফৌজদারী বিধিতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। বলা যায়, বাংলাদেশেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। ভারতের পার্লামেন্টে  বিলটা পাশ হলে ধর্ষণ মামলা তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে মহিলা কর্তকর্তাদের নিয়োগ করার ব্যবস্থা চালু হবে। ধর্ষিতার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও থাকবে। এই বিলে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা মহিলাদের দিয়ে করানোর কথা বলা হয়েছে। ধর্ষিতার বাড়িতে গিয়ে ধর্ষিতার বয়ান রেকর্ড করবেন সরকারি মহিলা কর্মকর্তা। সাক্ষীকে হুমকি দিয়ে বিরূপ করার ঘটনা যে হারে বাড়ছে, সেই কারণেই ফৌজদারী বিধিতে পরিবর্তন আনার পায়তারা চলছে ভারতে।
আমার এক বন্ধু আছে। কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করার মধ্য দিয়ে ওর যৌনজীবন শুরু হয়েছে। ধর্ষণ করার উত্তেজনা অন্যরকম। এই উত্তেজনার কোনো তুলনা হয় না। ও আমাকে দেখা হলেই সুযোগ মতো ধর্ষণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই উত্তেজনার সঙ্গে  পরিচিত হওয়া যে কোনো পুরুষের জীবনে একবার জরুরি। প্রথমে যৌনতার উত্তেজনায় যখন নারীদেহের উপর চড়াও হলে প্রাথমিক স্তরে যোনি অবাধ্য আচরণ করলেও একসময়ে বাধ্য হয়ে ওঠে এবং স্বয়ংক্রিভাবে প্রবিষ্ট শিশ্নটাকে একধনের ক্রমাগত আকর্ষণ ও অন্তর্মুখী চাপের মধ্যে দিয়ে শরীরের মধ্যভাগে সেই রহস্যময় গুহার ভেতর টেনে নেয়। বন্ধুটা এই রকমই একটা বয়ান দিয়েছিল।
প্রবল প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বীর্যপাতের একটি ধ্বনি কানে এসে পৌঁছায়।
আম্মা মৃত্যুর পথে। বোন জানিয়েছে। এই অবস্থায় বেগতিক ভাবনাটাকে মুঠোয় ভরে ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখি।
চোখে পড়ল। খবরের কাগজে প্রথম পৃষ্ঠায় মুদ্রিত ছবিটা দেখে শরীরটাকে পাথর ময়তা এসে গ্রাস করে। ভদকার প্রভাবে এইরকম কোনো দৃশ্য দেখছি কী-না, একটা বিভ্রম জাগে। জরিনা সুন্দরী বোধ করি শরীরে রক্তে ভালোই নৃত্য করছে !
খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবিটা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। ছবিটা ঢেউয়ের মতো একবার এগিয়ে আসে আরেকবার পিছিয়ে যায় কিন্তু একবারও যাচ্ছে না হারিয়ে। বরং ছবিটা বড়ো বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া একটা ছোট শিশুর শরীর। মুখটা এতটুকু বেরিয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে। সারা মুখমণ্ডল রক্তের ছিটায় কারুকার্যখচিত। নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত একটা চোরা স্রোত  ইট-পাথরের টুকরার মধ্যে লেপ্টে আছে। এবং রচনা করেছে এই মৃত বালক মধ্য দুপুরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কয়েকটি অক্ষর – স্বাধীনতা।
বোমাবর্ষণের পর ভেঙে যাচ্ছে বাড়িঘর। ধ্বসে পড়ছে অট্টালিকার কাঠামো।
শিশুরা ফুল ভালোবাসে। শিশুরা দেখে অবিরাম বোমাবর্ষণের মধ্যে তাদের মায়েরাও অসহায়। চোখের সামনে মারা যাচ্ছে মা। আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে শিশুরা জীবিত মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করে। এই শিশুটার সেই ফ্যালফ্যাল করা চোখ বন্ধ হওয়ার পর এখন যেন আমার দিকে তার মুখখানা ভাসমান। এই ঘুম চেয়েছিল বুঝি। রক্ত ফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি আঁধারের বুকে ঘুমায় এবার ; কোনোদিন জাগিবে না আর। আহ্ শিশুটা একটা থাবার মতো।
এডলফ হিটলার ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। ফ্যাসিস্ট এই লোকটার কথা সহসা উঁকি দেয় মনের মধ্যে। লোকটা যা বলতে চেয়েছিল তা-ই কী হলো দেখা !
লোকটা যেন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে এলো আমার কানের কাছে, বেদম বকে যাচ্ছে শুধু ; বলছে :
I could have annihilated all the jews of the world,but I left some so that some day the world will know why I was killing them.
.
মেটাও, মেটাও, মেটাও– যুদ্ধ যারা চাইছে তাদের যুদ্ধ নেশা মেটাও। আমি আত্মহারা না জ্ঞানহারা ভদকার প্রভাবে বুঝতে পারি না।
একটি নিমজ্জিত প্রেতলোকে বসে আমি অপেক্ষা করছি। কখন বেজে উঠবে আকস্মাৎ মৃত্যুঘণ্টা আমার কেউ জানি না।
‘To be or not to be’ করতে করতে সেলফোনটা হাতে তুলে নিয়ে আবার রেখে দিয়ে আমাদের প্রাচীন ল্যান্ডফোন থেকে আম্মার কাছে ফোন করি।
একটানা ফোন বেজে চলে। কেউ ধরে না। ফোন বেজে যায় ক্রিং ক্রিং ক্রিং ; জীবনের কানে কানে কঙ্কাল চুপিচুপি কথা কয়।
ঐশীর কথা আগেই বলেছি। ঐশী লেসবিয়ান এ কথা আপনারা আগেই জেনে গেছেন। ওর পার্টনার যে মেয়েটি ওকেও আমি চিনি। তার নাম মারিয়া। ওরা একসঙ্গে থাকে।
মারিয়া দেখতে টমবয় ধাঁচের। ওরা রোমান্টিক্যালি এবং সেক্সুয়ালি এট্রাকটেড ইচ আদার। ওরা ফিমেল হোমো সেক্সুয়াল। ওদের সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স একে অন্যে। লেসবিয়ান পার্টনাররা ফার্টিলিটির ব্যাপারে আগ্রহী নয়। কেবল যৌন সংসর্গ তাদের পছন্দ। ওরা যখন যৌন পারর্ফম করে আমরা পুরুষরাও সেভাবে একজন নারীর সঙ্গে এত  আনন্দে করি না।
একসময ঔষধপত্র দিয়ে সমকামীদের এ কাজ থেকে বিরত করার ঔষধপত্র দিয়ে সাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার হিসেবে চিকিৎসা চলত। সেবিয়ান শব্দটা এসেছে লেবোস-এক গ্রীক আইল্যান্ড শব্দ থেকে।
দ্য প্রাকটিক্স অব হোমো সেক্সুয়াল রিলেশন বিটউইন-এর অর্থ হলো লেসবিয়ান যাকে স্যাফোইজমও বলে। ৬০০ খ্রিস্টাব্দে কবি স্যাফো লেবোসে বসবাস করতেন। তিনি একজন লেসবিয়ান। সেখান থেকে লেসবিয়ান শব্দটি এসেছে।
ঐশী আমাকে এসব ভুলভাল পাঠ করিয়েছে। ঐশী আমাকে মাঝেমধ্যে সময় দেয়। মারিয়া এনজিওতে কাজ করে। কখনো ঢাকার বাইরে সে কাজে গেলে ঐশী আমাকে ডাকে। চরম অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ভিতরে প্রবিষ্ট করতে পারি না। ও তখন শান্ত, হীম, মৃতের মতো হয়ে যায়। উষ্ণ শরীর ছাড়া যৌনতা জমে না। আমি উষ্ণতা হারিয়ে তখন শীতলতম হয়ে পড়ি। শ্যাফো, মহিলা কবি, লেসবিয়ান, তার একটা কবিতার লাইন মনে মনে পড়ি pain penetration me drop by drop.

আমার কাছে ঐশীর শরীর উপভোগ্য। ওর শরীরে একটা পাতলা চর্বি আছে যা ঝিল ঝিল করতে থাকে। ও আমাকে খুলে খুলে অনেক কিছু দেখিয়েছে। pain শব্দটার মধ্যে কী প্রচ্ছন্ন থাকে কোনো যৌন বিকর্ষণ !
পেনিট্রেশান।  ইরেকশান। লাগানো−যেন একটা ভূখণ্ড দরকার। যে ভূখণ্ডের কোনো স্বাতন্ত্র্য নাই। যে ভূখণ্ডকে দখল করা যায়-পেনিট্রেশান। স্তন, যোনি, নিতম্বসহ একটি শরীর নাকি একটা নির্দিষ্ট নৈর্ব্যক্তিক স্পেস। যে স্পেসের কোনো স্বাধীকার অনস্বীকার্য। যে শরীর নিজে স্বাধীনভাবে ক্রিয়াশীল নয়, যে শরীর অপরের যথেচ্ছ ক্রিয়াশীলতায় অর্থবহ হয়ে ওঠে।
যে শরীর দখল নিয়ে তৈরি হতে পারে পারস্পরিক বা সামাজিক টানাপোড়েন।
বিয়ে করা মেয়েমানুষ−ইহা দখলীকৃত জমি। একজন ব্যক্তি ব্যতিত অন্য কারো চাষাবাদের প্রচেষ্টা নিস্প্রয়োজন। 
ঐশী জিনস পরে। আমি কামক্ষুধা নিবারণ করতে না পেরে বাথরুমে গিয়ে হস্তমৈথুন সেরে শরীর থেকে খানিকটা ভার নামিয়ে একটি গালি ঐশীকে দেই−বাপু হে, যতই জিনস পরো না কেন দাঁড়িয়ে তো আর মুততে পারবে না।
ও অবশ্য একবার রাগ করে আমাকে করে দেখিয়েছিল। আমি দেখছিলাম ওর শরীর। দুইটা স্তন, একটা যোনি, দুইটা নিতম্ব, ঝিলঝিল পাতলা মেদের আবরণ। অক্ষত যোনি অক্ষত আছে।
প্রচলিত সামাজিকতার মাপকাঠিতে দেখলে বিবাহমাত্রই বিষমকামী। একজন পুরুষ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। বিবাহ মানে সন্তান ধারণ, সন্তান ধারণ মানে যৌনতা। যৌনতায় অবতীর্ণ হওয়া এইভাবে, বিয়ের রাতে স্বামীর সঙ্গে বিছানায়, তারপর একই বিছানায় নিয়মিত দেহমিলন, কী নারীর সামাজিক ভূমিকা। ঐশীর কাছে আসলে এসব বড়সড় কথা মনে পড়ে বেশি। নিজেকে হালকা চালে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি।
আমি ঐশীর ওষ্ঠ অভিমুখে তাকিয়ে বলি, ঐশী ক্যান আই ইউজ ইয়োর মাউথ ?
ঐশী বলে, ওকে। বাট আই ওয়ান্ট ইয়োর টাং ফর মাই পুশি ক্যাট।
তারপর ঘর্ষন হয়। মন্থন হয়। উত্থান-পতন হয়। বিলীন হয়। জাগরণ হয়। বিস্ফোরণ হয়। তারপর তাপের শীর্ষে বৃষ্টিধারার বর্ষণ হয়।
একটা অম্লস্বাদে মুখ ভরে। লবণাক্ত জলে জিহবা ডুবে যায়।
কানায় কানায় ভরা উষ্ণ প্রসবণ ততোধিক উষ্ণ গহব্বরে উজ্জ্বল স্খলণের মধ্য দিয়ে শরীর নির্ভার ভাসমান ও উড্ডীন হয়।
একসময় স্বর্গচ্যুত দুইজন আমরা এক যুক্ত সৌন্দর্য হতে নীরবে খসে পড়ি যে যার মতো যেন নক্ষত্র একটা বিস্ফোরণের পর আতশবাজির মতো উড়ে, উড়ে ভেঙে ভেঙে গেল।
উত্তাল নদীতে একটি ভেলায় চড়ে দুলতে দুলতে এক সময় থেমে গেল সব। নদীকূলবর্তী একটি তীরে এসে ক্লান্ত দুইজন মানব-মানবী পরিশ্রান্ত হয়ে বিশ্রাম নেই। বুকের ভেতরে উদ্দাম ড্রামের বাজনা থেমে গেছে। ঝিরঝির করে এই বালুকাবেলায় আমাদের শরীরের ওপর বৃষ্টির ধারাপাত।
কেথাও  কোনো কোলাহল নেই। আদিম পিতা ও মাতার মতো আমরা। বন্দরে ভিড়বার আগে দূরে কোনো জাহাজ সহসা সিটি দিয়ে ওঠে তখন পরস্পরের দিকে তাকাই যেমন প্রথম ঈশ্বরের পূত্র কন্যারা নিজেদের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিল। দু’জনা দু’জনকে স্পর্শ করি। জলভেজা পাথরের শরীর স্পর্শ করলে এমনই মনে হবে তা অনুভব করি। কানায় কানায় পরিপূর্ণ যেন দুইজন।
সম্মুখে নদীর জলরাশি উথলে ওঠে না। দুপুরবেলার রৌদ্রের সৌন্দর্যে যে নদীর বিপুল জলরাশি ঝিকঝিক করছিল এখন সেখানে সন্ধ্যায়, আসন্ন অন্ধকারের এক ছায়াময় বিষণ্নতা। নদীতে, জলে দেখা এতক্ষণ বহমান আলোর গান আর নাই। নদীটা ক্রমশ অস্পষ্ট হতে থাকে। আমাদের মুখ ও শরীরও একসময় দেখা যায় না এত কাছাকাছি তবুও। অবশ হয়ে থাকা বায়ুর অসারতা ক্রমে কেটে গিয়ে অনুভূতি প্রসারিত হয়ে মগজের মধ্যে প্রশ্নাকারে উঁকি দিল−ঐশী কি উভকামী ? ক্লিটোরিস ও পেনিস কি তার কাছে দুই রকম মনে হয় ? অথবা সমান সমান।
ছায়াছন্ন ঘরে ঐশীর শরীরটা এখন রেখার টানে আঁকা অনালোকিত একটা অস্তিত্ব। ঐশী কি আমাকে দেখতে পাচ্ছে ? আমার বডিলাইন কি ও দেখতে পাচ্ছে ? কোনো দেহভাষা কি পাঠ করতে পারছে ?
আমার ও ঐশীর মধ্যে একটা নীরবতার ভাষা দখল করে রাখে।
যে কোনো নারীর সঙ্গে কতবার যৌন সংগমের পর ক্লান্ত অবশবিবশ শরীরে নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে চুমু খেয়েছি কতবার, ঠোঁটে, গ্রীবায়।
কিন্তু এখন শরীরের ভেতরে থেকে তেমন কোনো তাড়না একবারের জন্যেও অনুভব করছি না। ঐশী কি তা বুঝতে পারছে ?
নারীরাও কতবার শরীর শরীর খেলার পর তাদের ঘর্মাক্ত, উষ্ণ, রতিশোষিত শরীর আমাকে কতবার তীব্রভাবে আকুল করা মন্থন করেছে। আমার ওষ্ঠকে পান করেছে।
ঐশী আমাকে এখনও তেমন কিছু করে না।
ও আর আমি একটা রেতঃপাতের পর কোনোভাবেই আবার সংযুক্ত হতে পারি না।
আমাদের শরীর পালিয়ে থাকে। থাকে হারিয়ে।
শরীরের ভেতর শরীর ঢুকে গিয়ে আবার শরীর  যখন বেরিয়ে আসে তেমন কোনো অনুভূতির সংগ্রাম আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত।
আকস্মাৎ অনুভব করি ঐশী অপসৃত হয়ে গেছে।
সাপ খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। খোলশটা হয়তো পড়ে আরেছ ঘরের মেঝেতে।

ঘরের মধ্যে স্প্লিট এসিটা অনেকক্ষণ ধরে চলছে ; ফিনফিন করে ঠাণ্ডা হাওয়া ছড়াতে ছড়াতে ঘরটায় বরফের মতো একটা শৈত্যআবহ শরীরকে জুড়িয়ে রেখে এখন একরকম হিম লাগাচ্ছে আমার শরীরে। নগ্ন শরীর ঠাণ্ডায় একটু একটু করে কাঁপতে কাঁপতে হাত-পা-শরীর জমিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
আমি, মাটিতে, মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো আমার ব্রিফ, ভেস্ট, টি-শার্ট আর ট্রাউজার খুঁজে নিয়ে অন্ধের মতো এই ছায়াচ্ছন্ন ঘরের ভেতর নিজের গায়ে চাপিয়ে দিই।
ঘরের পাশে বাথরুমের শাওয়ার থেকে পানি পড়ার একটা অস্পষ্ট শব্দ কানে এসে বাজছে। আমি ঐ দরোজায় আস্তে করে কয়েকবার টোকা  দেই।
অস্ফুটে বলি : চললাম।

আমি বিযুক্ত করলাম নিজেকে, ঐশীর কাছ থেকে, এই ঘরের ভেতর থেকে এবার।

আমি বেরিয়ে আসি। নেমে পড়ি রাস্তায়। বাইরে রোদ্দুর। ভরদুপুর, রাস্তা, একলা আমি।
টুং টাং রিকশা চলছে। দুয়েকটা গাড়ি।
পান-সিগ্রেটের দোকানের সামনে জটলা।
চায়ের কাপে চুমুক। সিগ্রেটের ধোঁয়া।
দূরে কোথাও গান বাজছে। কৃষ্ণকলির হাস্কি ভয়েস অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে একটা কী যেন গান আর সুরের মধ্যে দিয়ে।
এই ভরদুপুরে এখন কয়টা বাজে তা কে জানে। ঘড়ি দেখলেই সময় জানা যায়। ঘড়ি দেখতে ইচ্ছা করে না। সময় কত হলো জানতে উৎসাহ হয় না। সময় থাকুক সময়ের জায়গায়, আমি থাকি সময় ছাড়া।
সময়কে বাদ দেই। স্পেসকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। আমি যেখানে এখন, সেখান থেকে হাঁটতে আরম্ভ করি।
একটু পা চালিয়ে ভাইজান।
হাটতে থাকি। পা ফেলি আর এগুতে থাকি। চলি আমি। চলতে থাকি। আবার আসব বলে যাই নাকি যাব বলে যাচ্ছি।
সূর্য মাথার ওপর। খাড়া রোদ্দুর নেমে আসছে। ছয়লাপ করছে রোদ।
রোদের মধ্যে একটা নেশা আছে।
রোদে চলতে চলতে বুদবুদ করা নেশার মতো একটা ঝিম তৈরি হয়। ঝিমঝিমানো রোদের মধ্যে পা চালিয়ে যেতে থাকি।
বুদ হয়ে চলি। রোদ একটা নেশার মতো এখন।
রোদের মধ্যে ভিজতে ভিজতে এলোমেলো পায়ে নেশায় মগ্ন হয়ে কত দূর চলে এসেছি জানি না।
নেশা, রোদের। নেশা আমাকে ডানে নিয়ে যাচ্ছে। বামে নিয়ে যাচ্ছে।
রাস্তা পারাপার হচ্ছি ডানে-বামে দেখে।
মানুষজন চলছে। গাড়ি চলছে। রিক্শা যাচ্ছে। ভ্যানগাড়ি, বাস চলছে। কোনোটা দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছি। কোনোটা মন্থর গতিতে। আমিও ওদের সঙ্গে আছি।
ফুটপাথ দিয়ে চলছি। বাসের জন্য যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। বাস এসে থামছে। যাত্রী তুলে নিচ্ছে। আবার চলে যাচ্ছে।
রাস্তায় অনেক নারীপুরুষ। বিভিন্ন বয়সের ওরা। যার যার গন্তব্যে চলেছে একেকজন।
আমার কোনো গন্তব্য নাই। আমার কোনো উৎস নাই।
আমার কোথাও কোনো তাড়া নাই।
আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নাই।
আমার সঙ্গে রাস্তায় কারো দেখা হয় না। কেউ আমাকে দেখে ডাক দিয়ে ওঠে না। কেউ আমাকে দেখে না।
আমি দেখি। পুরুষদের দেখি। নারীদের দেখি। শিশুদের দেখি। রঙবেরঙের মানুষ দেখি।
শুধু কেউ আমাকে দেখে না।
একটা ভিক্ষুক যত লোক চলাচল করছে জনে জনে গিয়ে হাত পাতছে। কেউ টাকা দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে ফিরিয়ে। আমার কাছে ভিক্ষুকটা এসে হাত পেতে দাঁড়ায় না। আমাকে ভিক্ষার জন্য থামায় না। আমি ভিক্ষুকের চোখে পড়ি না।
নারীদের দিকে চোখ ফেরাই। নেশার সঙ্গে নারীর একটা যোগ আছে।
ওদের দেহভাষা পাঠ করতে থাকি।
আমি অপাঙ্গে ওদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি মশগুলভাবে।
আমার শরীরের ভেতরে একটা সংগীত গেয়ে যায়।
আমার তাকানো ওদের চমকায় না। কেউ যেন আমাকে ভ্রূক্ষেপ করে না। জমাট নেশা, রোদের তাপে যে নেশা, সেই নেশার মধ্যে নারীরা এসে ভীর করে।
একের পর এক নারী আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতে থাকে। আমি ওদের দেখি। একেকজনকে দেখা শেষ না হতেই আরেকজন নারী চলে আসে। নারীরা আমাকে ফেলে চলে যায়। একের পর এক।
একজন নারী আমাকে ফেলে যায় তো আরেকটা নারী সামনে চলে আসে সে চলে যায় তো অন্য একজন নারী চলে আসে অগণিত নারী এইভাবে চোখের সামনে ছন্দ তুলে চলে যায়।
আমাকে মাতিয়ে দিয়ে ওরা চলে যায়।
জাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। নারীর স্রোতের মধ্যে আমি সাঁতার  কেটে কেটে চলে যেতে থাকি। ওরা আমার চারিপাশ দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে যায়। নারীদের চলে যাওয়া দেখি, চলে যাওয়া নারীদের দেখি। কিশোরী। তরুণী। কত প্রকার নারী। সবাক। নির্বাক।
নারীদের চোখ, নাক, গাল, ঠোঁট, ভ্রূ, হাত-পা, স্তন, কটিদেশসহ নারীদের ভাবপ্রকাশ দেখি মগ্নচৈতন্যে।
কথা বলার সময় মেয়েদের শরীর ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি একটিভ আর সক্রিয়।
উচ্ছ্বাসে, আবেগের মাত্রা ভেদে হি-হি/খিল-খিল/মধুর স্বরে/মুচকি হেসে ওঠে ওরা।
দেখা হলে বান্ধবীর কাঁধে হাত রাখে, দু-হাত ধরে কথা বলে, জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
জমকালো জামা কাপড় পরিহিত মেয়েদের রাঙানো ঠোঁট, কাজলঘেরা চোখ দেখলেই বুঝি ওরা কারা।
শরীরী ভাষাই ছিল সভ্যতার আদিতে মনুষ্য সমাজের জ্ঞাপনের একমাত্র উপায় বলে কথাটি চলমান নারীকে আমাকে ফিরিয়ে দিল।
অজন্তা-ইলোরা-কোণার্কসহ ভারতের বিভিন্ন মন্দিরের গায়ে খদিত উন্নত পীনপয়োধরা, নিবিড় নিতম্বিনী এবং তাদের পুরুষসঙ্গীদের সঙ্গে মিথুনরত মুর্তির কথা মনে পড়ে যায়। সেকালের ভাস্করদের যে নারীদের যৌনতার দেহভাষা পড়ার ক্ষমতা ছিল অপরিসীম তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
মস্তক উন্নত করিয়া, ঈষৎ বঙ্কিম গ্রীবাভঙ্গি করিয়া নবকুমারের মুখপ্রতি অনিমিষ আয়তচক্ষু স্থাপন করিয়া রাজ রাজমোহিনী দাঁড়াইলেন। যে অনমনীয় গর্ব্ব হৃদয়াগ্নিতে গলিয়া গিয়াছিল, আবার তাহার জ্যোতি ; স্ফূরিল ; যে অজেয় মানসিক শক্তি ভারতরাজ্য শাসন কল্পনায় ভাত নাই, সেই শক্তি আবার প্রণয় দুর্ব্বল দেহে
 সঞ্চারিত হইল। ললাট দেশে ধমনিসকল স্ফীত হইয়া রমণীয় রেখা দেখা দিল ; জ্যোতির্ময় চক্ষু ; রবিকর মুখরিত সমুদ্র বারিবৎ ঝলসিতে লাগিল ; নাসারন্ধ্র কাঁপিতে লাগিল। স্রোতবিহারিণী রাজহংসী যেমন গতি বিরোধীর প্রতি গ্রীবাভঙ্গি করিয়া দাঁড়ায়, দলিত ফণা ফণিনী যেমন ফণা তুলিয়া দাঁড়ায়, তেমনি উম্মাদিনী যবনী মস্তক তুলিয়া দাঁড়াইলেন।...
কপালকুণ্ডলার মতো এমন কোনো দৃশ্যে কোনো নারীকে চোখে পড়ে না।
ঘুঙুরওয়ালা চরণচক্রপরা বাড়ির নতুন বউ সলজ চলাফেরার সময় যে রকম দক্ষিণী বীণা বাজে, শবনমের গলার শব্দ সেই রকম−কানে বাজে না।
সিঁড়ি দিয়ে উঠবার সময় সামনে পড়ে সুজিতের  বৌ সুমনা। পাশে সরে দেয়াল ঠেলে সরিয়ে দশ বিশ হাত ব্যবধানের চেষ্টাটা সুমনা এমনভাবে করে যেন গুন্ডার হাতে মান বাঁচাতে ভদ্র মেয়ে সতী বৌ ইটের দেওয়ালে কবর চাইবে−পথ চলতে-চলতে, নারীদের সুষমা চোখ দিয়ে পান করতে করতে এইরকম পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হলো না।
দৃষ্টির একটা তরঙ্গ আছে। সেই তরঙ্গ ভাসমান ও চলমান নারীদের চতুর্দিকে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করে ক্ষান্ত হয় ; অপরপক্ষে কোনো সাড়া তোলে না।
হাত যদি নাড়ে নৃত্যনাট্য
কথা যদি বলে ছন্দ,
ভ্রুকুটি শাসনে অবশ করেছে
শরীরের চতুরঙ্গ।

বুঝতে পারছি রোদে নেশা হাই হয়ে গেছে। এত রোদে, পানি নয়, যৌনপিপাসা যেন অস্তিত্বের ভেতর খেলা করে যাচ্ছে।
একদা বিভূতিভুষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে দিয়ে রাস্তায় এক অসামান্য নারী চলে যাবার পর বিভূতিবাবু বুক চাপড়ে যে বলেছিলেন, ‘এক্কেবারে মেরে দিয়ে গেল’−কথাটা একদম সত্য তা মেয়েদের দেখতে আমার শরীরের মধ্যে হাজার তারের বীণায় একই কথা বলে উঠল।

নেশা চড়ে গেছে। পথচলতি মেয়েদের স্তন ও নিতম্ব। সামনে থেকে যা আসছে তাদের দেখি স্তন আর পেছন থেকে আমাকে অতিক্রম করে যারা চলে যাচ্ছে তাদের কেবল নিতম্ব চোখে পড়ছে।
হাই হিল পরে হাঁটা মেয়েদের নিতম্ব বেশ জার্ক করে। নিতম্বের দোলাচলে ভিত পর্যন্ত কোনো  কোনো মেয়ে কাঁপিয়ে দিয়ে চলে যায়।
স্তন কত প্রকার। টিনএজারদের একরকম আর মিসেসদের একরকম। তবে কোনো স্তনের সঙ্গে কোনো স্তনের কোনো মিল নাই।

চলমান নারীদের স্তন সাইজ, ফ্রেম সাইজ, কাপ সাইজ দেখতে পথে পথে চলি।
যে সকল মেয়েদের স্তন সাইজ ছোট তারা নিজেকে আকর্ষক করে তুলবার জন্য এমন ব্রা বেছে নেয় যেন ব্রেস্ট লাইন সুন্দর লাগে। সফট কালারের ব্রা পরে এইসব মেয়ে।
এ কথা আমি জানলাম কেমন করে?

ওহ্ বয়!

রোদের উথালপাতাল সমুদ্রের ভেতর দিয়ে, রাস্তা পেরিয়ে, ফুটপাথ ধরে হেঁটে হেঁটে দেখতে দেখতে নেশাময় ঘোরের ভেতর অবশেষে কতদূর চলে এসেছি ঠিকঠিক তা ঠাহর করতে পারি না।
কতদূরে ছিলাম আমি সহসা মনে পড়ে। খুব দ্রুত বুঝে উঠতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করে আমার এই পথচলা।  পথের শেষ কোথায় হবে এ ব্যাপারেও কোনো তা আন্দাজ নাই।
ক্লান্তি নাই আমার শরীরে। নারীদের চনমনে শরীর দেখতে দেখতে যতো ক্লান্তি পথশ্রম হওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় তার কোনো লেশমাত্র অনুভবরে স্তরে নাই।
শুভ্র পোশাক পরিহিত একদল নারীর শোভাযাত্রার সামনে পড়ে গেলাম।
অজস্র কলকলানি মধ্যে এই শ্বেতশুভ্র নারীগণ সম্মুখ দিয়ে চলেছে। হাত নেড়ে কথা বলছে। যত কথা বলছে তার চেয়ে শরীর বেশি ভঙ্গি ও মুদ্রা দেখাচ্ছে।
ওরা কেউ নার্স, কেউ ডাক্তার।
ডিউটি আওয়ার  শেষ হওয়ার পর এইসব নারীরা তাদের শ্বেতশুভ্র  এপ্রোন চড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে।
কত রকম বয়স নারীদের।
কেউ শাদা এপ্রোন খুলে ফেলে হাতে নিয়ে বাড়ির পথ ধরছে নাকি কেউ অপেক্ষা করছে যার সঙ্গে দেখা করার জন্য ছুটছে।
এপ্রোনের নিচে জামা, শাড়ি। নানা বর্ণ, নানা ধরন। নানা রূপ।
শাড়ির নিচে থাকে ব্রা। পেটিকোট।

ব্রা, পেটিকোটের নিচে তাদের ত্বক। ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকে প্রলেপের মতো মেদ।
মেদ ও ত্বকের নিচে থাকে মাংশ। নারী মাংশ।
সালোয়ার কামিজ খুললে লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে স্তন, নিতম্ব।
যোনি গভীর হয়ে থাকে। কেশ থাকবে যোনিতে।
তারপর ত্বক ও মেদ ঢেকে রাখে এইসব স্তন, যোনি, নিতম্ব, কটিদেশ। ঢেকে রাখে হাড়গোড়, শিরা ও ধমনী, ওদের শরীরের প্রবাহিত রক্ত।
এপ্রোনের নিচে সালোয়ার, কামিজ, শাড়ি পেটিকোট, ব্রা, প্যান্টি ঢেলে লাজুক শরীর আর বায়োলজি, এনাটমি, ফিজিওলজি।
এই নারীরা কেউ মা, স্তন্য দান করে শিশুকে, আবার যে মা সে কারো স্ত্রী, শয্যায় বিছানায় চিরচেনা স্বামী পুরুষকে শরীর দেয়, বিনিময় করে শরীর। নারী বহুরূপিণী।
ঠাস করে লম্বা এক সেলাম ঠুকে দাঁত কেলিয়ে হাসে সাকুরার গেটের সামনে দাঁড়ানো খাকি রঙের পোশাকপরা সেই চিরপরিচিত প্রহরী।
বারে যাবো না রেস্টুরেন্টের মধ্যে গিয়ে বসব!দারোয়ানের লম্বা সালাম এতক্ষণ পর কেউ আমাকে চেনা লোক পেয়ে সাদর সম্ভাষণ জানালো তাতে আমার মনটা ভিজে যায়।
তিনটা বাজে নাই বোধ হয়। বার হয়তো ক্লোজ হয় নাই। ডে-ড্রিংক করতে যে ভালো লাগাটা রক্তের সঙ্গে মিশে আছে তা আমাকে উস্কে দেয়।
খুব ইচ্ছে করে কোনো সেবিকার সঙ্গে চৌপর দুপুরে হাতে গেলাশ নিয়ে জিন- এন লাইম উইথ টনিক অনেকক্ষণ ধরে পান করতে। অথবা কাঁচা স্কচ অন রক শুধু বরফ দিয়ে আস্তে আস্তে চুমুক দিতে দিতে কলিজাটা ঠাণ্ডা করতে।
এক নেশা থেকে আরেক নেশার মধ্যে ঢুকে পড়ার জন্য, রেস্টুরেন্টের কাঁচের দরোজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করি। আলো থেকে ভিতের ঢুকে এই আলো আঁধারির মধ্যে কতক্ষণ আন্ধা  থাকি। অনেকক্ষণ কিছু চোখে দেখি না।
মোখলেস ভাইকে খোঁজ করি। তাকে ডাক দেই। দেশে এতলোক দিনের বেলায় মদ্যপান করছে দেখতে ভালো লাগে। মদ্যপানকে বৈধতা দেওয়ার সপক্ষে এই দৃশ্যই যথেষ্ট। বাবুল ভাইয়ের গ্রীণ স্টোরে সকাল সকাল না গেলে মদ পাওয়া যায় না। কত মানুষের মদ্যপান  প্রয়োজন অথচ বৈধতা দিলে যেন জাতির সতীত্ব-হাইমেন পটাশ করে ছিড়ে গিয়ে টুপটুপ করে রক্ত পড়বে আর জাতি নাকি দেশ সতীত্ব হারানোর ব্যথায় তারস্বরে কান্নাকাটি করতে থাকবে। এই জাতির অনেক কিছু না হওয়ার পেছনে এটাও একটা প্রমাণ সাইজের কারণ বই কি!
রেস্টুরেন্টে যে দিকে কাঁচের দেয়াল, ওদিকে কোনো টেবিলে বসলে গতিশীল একটি রাস্তা দেখা যায়, দেখা যায় শেরাটন হোটেল, বারডেম হাসপাতাল।
ঐদিকে মোখলেস ভাইয়ের ডিউটি। আমাকে তিনি একটি টেবিলে বসতে ঈঙ্গিত করে বলে আমি আজ আগে থেকেই নেশা করে এসেছি কিনা।

হুইস্কির অর্ডার। নো সোডা। শুধু বরফ।
বার আওয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই একসঙ্গে কতগুলো পেগ অর্ডার দেই। কড়া ভাজা আলু  উইথ চিলি সস অর্ডার হাকিয়ে আঙুল দেখিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য পা বাড়াই।
শিশ্নে বীর্য শুকিয়ে আঠার মতো লেগে আছে।
প্রথমে তীব্র বেগে মুত্রপাত করতে করতে ব্রি. জে. মইত্যার মুখের উপর মুতছি এমন এক সুখ নিজের ভেতর অর্জন করি। একটা সাইকিক লোক আমাকে সাইকিক করে ফেলেছিল। মূত্রপাত শেষে টিস্যু দিয়ে প্রথমে শিশ্ন পরিস্কার করি। পরিস্কার করি চটচটে হয়ে থাকা রতির দাগ।
নিজেকে আজ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার নির্ভার মনে হচ্ছে।
টেবিলে মোখলেস ভাই পটে বরফ, আধা বোতল স্কচ, গেলাস আর বাদাম সঙ্গে শসা সাজিয়ে দিয়েছে।
ডিউটি আওয়ার শেষ হয়ে যাচ্ছে। কড়া ভাজা দেয়ার পর ‘আর লাগলে বলেন। পরে চাইলে কিছু পাইবেন না’ এই রকম গোছের কথা বলে বিদায় নেবে।
গেলাসে একটা বড় পেগ বানিয়ে দেয় মোখলেস ভাই।
সোডা দেবে কিনা আবার জানতে চায়। আমি মাথা নাড়লেও আরেকটা বোতল সোডা ওয়াটার রাখে টেবিলে।
কড়া আলু ভাড়া বিলের মেমো দিয়ে টাকা গুনে নিয়ে যতক্ষণ চাই বসতে পারা যাবে জানিয়ে চলে যায় মোখলেস ভাই।
আমি বলি। আমি আছি। সন্ধ্যার সময় আবার তার ডিউটি শুরু হলে দেখা হবে বলে জানাই।
লম্বা করে গেলাশে একটা চুমুক দেই। চোঁ চোঁ করে শরীর শুষে নেয় নিঃশেষে এই সুধারস। এতটা পিপাসা যে ছিল তা অনুভব করি নাই। আরেকটা পেগ বড় করে নিয়ে এবার সোডা সহযোগে আকণ্ঠ পান করি।
এখন ধীরে যাব। শুধু বরফ দিয়ে পান করবো। পুরো গেলাশে, একটা পেগ নিয়ে তাতে বরফকুচি ভর্তি করে নিয়ে বসে বসে চুমুক দিতে থাকি এমনভাবে যেন রক্তের সঙ্গে একটু একটু করে মিশিয়ে পান করে যাচ্ছি।
এই হচ্ছে সোমরস, সুরা প্রবাহিনী, শক্তিদায়িনী। হে সোমরস, তোমার মতো উজ্জ্বল কেউ নাই। যখন তোমাকে ঢালা হয় তখন তুমি সব দেবতাকে আহবান করো, তাদের অমরত্ব প্রদান করো।
মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ সর্বদাই নিস্ফল হয়েছে কেননা শাসকরা অবাধে মদ্যপান করতেন আর প্রজাদের মদ্য গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন।

সিগারেট কিনতে পাঠানোর জন্য টাকা বের করতে ওয়ালেট খুলে দেখি টাকা মদের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে প্রায়। আধা প্যাকেট সিগারেট আনতে দেই অগত্যা। আমাদের দেশে মদের দাম বেশি। সব জিনিসের দাম বাড়ার সঙ্গে মদের দামও বেড়ে গেছে। এই ব্যাপারে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই। সরকার আছে চাল, ডাল, তেল এই যাবতীয় ভেতো বাঙালির খাবারদাবারের দাম কমানোর চিন্তায় ও কর্মে মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে ব্যস্ত।
মদের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কমানোর জন্য দাবী তুলে একটা চিঠি দেয়া দরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী আর পর্যটনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে একটা আবেদন করার চিন্তাটা ফাইনাল করে ফেলি। একটি নির্বাচিত সরকারের উচিত, যারা তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতা আরোহণে ভূমিকা রেখেছে মদ্যপায়ী হলেও মদ্যপায়ীদের দিল বড়ো হয়, এই কথা মনে রেখে এই সংকীর্ণ রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে বসবাসকারী যে কোনো রাজনৈতিক সরকারের উচিত তাদের প্রতিটি ভোটারের আবেদন আমলে আনা এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির এহেন নিত্যপানিয় মদের দাম কমিয়ে আনা। আমার মতো একজন ভোটারের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করা এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া উচিত।
সরকারের মনে রাখা দরকার মদ্যপায়ী ততক্ষণ পানপাত্র হাতে নেয় যতক্ষণ দৃষ্টি ও মনের মধ্যে প্রভাব না পড়ে।
মদ হলো গভীর দুঃখহরণী, বিপুল আনন্দদায়ীনি, মানবিকতার মহান ঔষধি। খাও, খাও আরো খাও, মেঝেতে গড়াগড়ি খাও, উঠে পড়ে আরো খাও, দ্বারে মোক্ষ দেখে যাও। আহা কী সুন্দর কথা।
কয়েক পেগ নেমে গেছে। আলু ভাজা সস মেখে চিবোতে থাকি। একটা কাটলেট হলে জমতো।

বাৎসায়ন অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্ত্রীদের দৈনন্দিন কর্তব্যের মধ্যে সুরা ও আসবের পাত্রগুলি সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহারের কথা রয়েছে। সম্ভবত এই মদিরা বিশেষ উৎসবে ব্যবহৃত হতো। স্ত্রীদের মদ্যপানের কথা বাৎসায়ন কোথাও লেখে নাই। অবশ্য রক্ষিতাদের মদ্যপান করার জন্য সাক্ষ্য রয়েছে।
দাসিদের নেশা ধরানো এবং তারপর বিশেষ উদ্দেশ্যে মদিরা ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে।
চরক সংহিতায় মদকে বলা হয়েছে মদ ও দেহে তেজ সঞ্চারক, নিদ্রাহীনতা-দুঃখ-ক্লান্তির প্রতিষেধক, ক্ষুধা-সুখ-হজম শক্তির উৎপাদক।

নেশা হিসাবে না নিয়ে ঔষধ হিসাবে পান করলে এ অমৃতের কাজ করে। দেহের অভ্যন্তরীণ তরল পদার্থের স্বাভাবিক প্রবাহকে নিরাময় করে।
মদ স্বাভাবিক খাদ্য, কিন্তু যথেচ্ছ পান করলে রোগের জন্ম হয়। কিন্তু ঠিকঠাক পান করলে এ অমৃতের সমান।
এসব কথাবার্তা সব আয়ুর্বেদশাস্ত্রে লেখা আছে। আয়ুর্বেদ হচ্ছে চিকিৎশাস্ত্র।
পান করতে করতে বোতল নেমে গেছে। অর্ধেক বোতলে যে পরিমাণ ছিল তা প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে।
এখন চোখের সামনে চারিদিকে কেবল ঢেউয়ের পর ঢেউ। ঐ সেবিকার সঙ্গে বসে আজ যদি দ্বি-প্রাহরিক মদ্যপান করা যেত তবে ঢেউয়ের মতো একবার সামনে এসে ধরা দিত আবার দূরে সরে যেত। কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলার মতো লাগতো তখন।
আমার একবার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল ঐ সুন্দরী সেবিকা আমাকে যত্ন করত প্রতিদিন। আমার নাভির গোড়ায় ঐ যে রক্ত জমাট না বাধার ইনজেকশন দেয়া হতো ; খুব যত্ননিয়ে পুশ করত ইনজেকশন। আমার শিশ্ন ও যৌনকেশের একটু ওপরে ওর আঙ্গুলি সঞ্চালন করত। অনেকক্ষণ ধরে যত্ন নিয়ে আমার নাভির গোড়ায় সে সুঁই দিত।
সেবিকার স্তনে একবার আমার স্পর্শ লেগেছিল। অসম্ভব নরম ওর যুগলস্তন ছিল। ওর স্তনযুগলও সেবিকার মতো একধরনের শুশ্রূষা দিয়েছিল আমাকে।
আমার হার্টের আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়েছিল। একটা ব্লক মারাত্মক। ব্লক খুলতে রক্ত নালিতে আমি সেবিকার হাসি, ওর ঠোঁট, ঠোঁট কাঁপিয়ে কথা, আঙ্গুলের স্পর্শ, স্তনের ছোঁয়ায় কত দ্রুত ভালো  উঠছিলাম, খারাপ শারীরিক অবস্থায় আমার মধ্যে কোনো আতংক টের পাচ্ছিলাম না, শুধু মনে এই সেবিকার সঙ্গে একদিন দ্বি-প্রহরে বসে–চৌপর দুপুরে মদ্যপান করব।
আমি ঘোলা চোখে দেখি ঐ সেবিকা শুয়ে আছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। শাদা চাদরের ওপর ওর শরীরটা শুয়ে আছে। ও কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
অপারেশন কক্ষের মতো আবার অপারেশন কক্ষ নয়।
একটা শাদা চাদর দিয়ে ওর শরীরটা ঢাকা।
ওর মুখটা সুন্দর। ঠোঁটে একটা হাসি লেগে আছে। চোখের পাতায় দুষ্টুমি খেলা করছে।
আমি ওর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে। হাতে বকুলফুলের মালা। যে কোনো নারী বকুলফুলকে মদ দিয়ে ভিজিয়ে না দিলে সেই ফুলের সৌরভ বিকশিত হয় না। মদে ফুলের সৌরভ পাওয়া যায়। আমি কী সেজন্য দাঁড়িয়ে আছি ?
পাতলা চাদরের নিচে সেবিকার শরীর। শরীরের সমস্ত ভাঁজ সমস্ত খাঁজ আমার সামনে প্রস্ফুটিত হয়ে আছে।
ওর স্তনযুগল উন্নত হয়ে আছে। শুভ্র চাদর ভেদ করে জেগে আছে। উরুযুগল ও উরুসন্ধি, জানু ও জংঘা পাতলা এক আবরণের নিচে স্থির হয়ে আছে।
সেবিকার চোখের দিকে তাকাই। সেই পরিচিত দুই চোখ। চোখের কোণে দুষ্টুমি। ও মেয়ে তোমার কী অসুখ! সেবিকা হাসে। সেই হাসি। একই রকম হাসি। হাসির মধ্যে আছে মাদকতা। মাদকতা দেয় নেশা। আমি ঢলে পড়ি নেশায় নেশায়। নেশার ভেতর দিয়ে আবার যেন নিজেকে খুঁজে পাই।
সেবিকা আমাকে তার দুই হাত দিয়ে এক প্রবল ক্ষমতায় জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে, কতদিন তুমি নাই।
ওর শরীরের ওপর থাকা পাতলা ঐ শুভ্র চাদরের আবরণ ধীরে খসে খসে পড়ে। আর ওর সেই মমতাময় শরীর আমার চোখের সামনে মেলে ধরে।
আমি পরম তৃষ্ণার্তের মতো ওর দুই স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকি শুধু। বুকের ওপর থেকে ভাঁজ খুলে চাদরটা ওর কটিদেশে এসে জমা হয়ে আছে।
ওর স্তনযুগল ধবধবে। স্তনচূড়ায় বাদামের মতো দুইটা বিন্দুর মতো নিপল বড় বেশি উন্মুখ ব্যগ্র হয়ে অপেক্ষা করছে।
আমি স্তন স্পর্শ করি। একটা তীব্র বিদ্যুত আমার সারা শরীরময় চলাচল করে। আমি শাদা চাদরের ঢাকনার ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসি।
ওর ঊরুসন্ধি, –শুক্লপক্ষের প্রথম দিকের চাঁদের মতো যোনি। ওর ঊরুযুগল ও জংঘা অনির্বচনীয় এক দরোজা আমার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
আমি, ঐ সেবিকার, শরীরের ইঞ্চি করে করে পুরোটা স্পর্শ করি এবং উষ্ণতায় ডুবে যেতে থাকি। আমার ওষ্ঠ ডুবে যেতে থাকে। আমার স্পর্শে ওর শরীর কেঁপে কেঁপে যায়। একটা বিদ্যুৎলতার মতো সেবিকা আমাকে আবার শুশ্রূষা দেয়, সুস্থ হওয়ার জন্য ওর পুরোটা শরীর আমার শরীরের  ভেতর নিয়ে আসি।
ওর চুলের ঘ্রাণ নেই আমি। সেখানে অমৃতের সুবাস। ওর শরীরের ঘ্রাণ নেই। ওর শরীরে বেহেশতি খুশবু।
সেবিকা নিজের হাত দিয়ে আমার চোখ ঢেকে দিয়েছে। এমন অবস্থায় তাকে যেন না দেখি এমনই তার ইচ্ছা। তারপর নিজের চোখ দুটিও নির্মীলিত করেছে লজ্জায়।
আমি একে একে সেবিকার ললাট, অলক, কপোল, নয়ন, বক্ষ, স্তন, ওষ্ঠ, মুখের মধ্যভাগ, উরুসন্ধি, বাহুমূল এবং নাভিমূল চুম্বন করলাম।

ফিরে আসি পানপাত্র হাতে। গেলাশ ভর্তি টইটম্বুর বরফ গলে হুইস্কির সঙ্গে মিশে একটা নিটোল অমৃত মুখের কাছে ধরে হুইস্কির গন্ধটা বুক ভরে নিতে নিতে ছোট চুমুক দিয়ে পান করে চলি অনেকক্ষণ।
ফ্রেশ রুমে আবার যাই ; ছয়/সাত পেগের মতো পেটে পড়েছে। এখন কিছু বিয়োগ করা দরকার। জলবিয়োগ করি, একইভাবে সেই একজনের মুখের উপর। ভারী আরাম হয়। আবার ফিরে আসি নিজের টেবিলে।
বার এখন ফাঁকা। সন্ধ্যা আসরের আয়োজন চলছে। একটা সিগ্রেটে দিয়াশলাইয়ের আগুন জ্বালাই। ধূয়া উদগীরণ করতে করতে কাঁচ দিয়ে বাইরে দেখি।
মন্ত্রীপাড়া আর শাহবাগ থেকে গাড়ি এসে ছুটাছুটি করছে। মোড়ে ট্রাফিক সার্জন ডিউটি করছে। সিগনালে লাল-সবুজ-হলুদ বাতি জ্বলছে।
শাহবাগ থেকে আসা গাড়িগুলো সিগনালে থামছে। সবুজ বাতি জ্বললে সোজা চলে যাচ্ছে। সিগনাল পড়লে লোক রাস্তা পার হচ্ছে।
আবার কোনো গাড়ি মোড় ঘুরে মন্ত্রীপাড়ার দিকে চলে যাচ্ছে। 
মন্ত্রীপাড়ার দিক থেকে যে গাড়িগুলো আসছে, সিগনাল পড়লে থেমে যাচ্ছে। সবুজ বাতি জ্বলে উঠলে আবার ডানে মোড় নিয়ে ছুটে চলে যাচ্ছে।
ট্রাফিক পুলিশ আর সার্জন হাত দেখিয়ে গাড়ি থামাচ্ছে জ্বলে ওঠা ট্রাফিক সিগন্যালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। গাড়ি থামলে ফুলওয়ালিরা গাড়ি থেকে গাড়িতে ফুল বিক্রির জন্য ধর্ণা দিচ্ছে। কোনো কোনো গাড়ি থেকে হাত  বের হয়ে এসে ফুল কিনে নিচ্ছে।
গোলাপ ফুল আর রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হচ্ছে। পান করা শেষ হলে, ভরপুর হয়ে নিচে নামলে ফুল কিনব।
সন্ধ্যা আসন্ন। রাস্তার বাতি জ্বলে উঠছে। উল্টোদিকে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপনের গায়ে আলো এসে পড়েছে।
একটা বিলবোর্ডের গায়ে একটা নারী শোভা পাচ্ছে। নারীটার আকৃতি প্রমাণ মাপের। মনে হচ্ছে জীবন্ত এক নারী বিলবোর্ডের গায়ে বন্দি হয়ে বিজ্ঞাপিত করছে নিজেকে।
ছবির মতো মেয়েটা...মেয়েটার ছবির  দিকে বার বার আমার চোখ চলে যাচ্ছে।
কেউ তাকালে মেয়েরা তা বুঝতে পারে। তাকিয়ে দেখি। আমার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে। আমি মেয়েটাকে কামনা করতে থাকি। বিলবোর্ডের ছবির মেয়েটা তা বেশ বুঝতে পারে। আমি অবাক হয়ে দেখি, মুচকি হাসছে। ভ্রূ-পল্লবে ডাক দিচ্ছে আমাকে। আমারতো এখন উড়ে যাওয়া হবে না।
মেয়েটা বলে, আমি তো বন্দিনী। তুমি আসো।
আমি বলি। তুমি আসো। আমাকে একটু সঙ্গ দাও। মেয়েটা কথা বলে না। দূর থেকে তাকিয়ে হাসে।
আমি ওর দিকে একটা উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে দেই। বলি, তুমি আসলে অজস্র চুম্বন। পার্কের সব ফুল এনে তোমাকে দেব। আমি একা। আমাকে সাড়া  দাও মেয়ে।
মেয়েটা বিলবোর্ডের গায়ে ছবি হয়ে থাকে আবার থাকে না ছবি হয়ে, সে কীভাবে আমার ডাক উপেক্ষা করবে তাতো জানে না। ওকে যে ছবিতে এঁকেছিল সে তো এই ব্যাপারে ওকে বলে দেয় নাই।
মেয়েটার ছবি বিলবোর্ডে আঁকা থাকে।
মেয়েটা থাকে। মেয়েটা বেরিয়ে চলে আসে। এসে আমার সামনের চেয়ার বসে। কপালের ঘাম মুছে নিয়ে সে ঢক ঢক করে পানি খায়।
ছবির মতো সুন্দর মেয়েটা আমার সামনে ছবির মতো চুপচাপ বসে থেকে বলে, আমার হাসি পাচ্ছে।
আমি বলি, কেনো ?
ও বলে, এমনি।
আমি বলি, এমনি কেউ হাসতে পারে না তোমাকে একটা জোক শোনাই। তুমি শুনবে ?
সে হেসে বলে, শোনাও তোমার জোক। আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। তাড়াতাড়ি চলে যাব। আরেকদিন আমাকে ডেকো। তখন এসে অনেকক্ষণ থাকব।
আমি বলি। তোমাকে চুমু দিব না ?
মেয়েটা বলে সেদিন দিও। আর ফুল দিও। তাড়াতাড়ি আজ চলে যাব।
তুমি জোক শোনাও।
আমি বলি। তোমার যখন বেশি তাড়া এক লাইনেরএকটা জোক শুনে যাও। সেটা হলো, (missunderstanding)-এর বাংলা অনুবাদ। তার মানে miss(মেয়েটি), under (নিচে), standing (দাঁড়িয়ে আছে)।
মেয়েটা  মদ্যপ আমার হাইথট জোক মতো এই কিছু একটা শুনে শেষপর্যন্ত হাসলো কী-না তা ঠিক বোঝা গেল না।
আমি সন্ধ্যায় বার থেকে  বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আসন্ন বসন্তের হাওয়া। শীত যাই যাই করছে।
কখনো নিজেকে উদভ্রান্ত মনে হয়। তাড়া করে ঘটনার ফ্ল্যাশব্যাক যখন। একদা উপর্যুপরি ধর্ষণের পূর্বে একটা অপরূপা নারী ছিল আমাদের করতলগত। স্পর্শ  ঘ্রাণ নেয়া, শ্রবণ ও দর্শন করে চিনে ফেলতে কষ্ট হয় না নারীকে আমাদের।
স্পর্শে তার কোমলতা আছে ; সুবাস আছে ঘ্রাণে তার শরীরের মধ্যে।
শ্রবণকে আচ্ছন্ন করতে পারে কণ্ঠস্বরের কমনীয়তা আর দৃষ্টিপাত এক ধরনের  স্নিগ্ধতা  চোখ দুটি আমাদের ভরিয়ে তুলতে পারে।
এই জরুরি অবস্থার দেশে একটি নারী আমাদের সামনে অবারিত, উন্মোচিত, উন্মুক্ত এবং ভীত হরিণীর মতো কম্পমান। নারীটিকে আমরা সম্ভোগ করব। ধর্ষন করব আমরা। আমাদের উলঙ্গ শরীর মেয়েটার শরীরের চারপাশে চিৎকার করতে করতে নৃত্য করছিল। আমাদের শিশ্ন উত্থিত হয়। সেই উত্থান অনিবার্য পতনপ্রার্থনা। নারী শরীরটাকে তাকে কামনা বাসনা করে তাকে ভোগ করার জন্য শরীরের মধ্যে বিদ্যুৎময়তা এক প্রস্তুতির দিকে ধাবিত করছিল। ধাবমান অশ্বের মতো আমরা তখন।
পৃথিবীতে এই প্রথম কোনো নারী ধর্ষিতা হচ্ছে না। আমাদের শরীরের খোরাক হচ্ছে না। অজস্রবার নারী পুরুষের ভোগে ব্যবহৃত হয়েছে।
একটি তীব্র আর্তনাদ করে উঠে মেয়েটি।
হাইমেন ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত।
রক্তকথা, আর্তনাদে।
একসময় মেয়েটাকে কোনো শক্তি প্রয়োগ করতে হয় না আমাদের।
আমরা মেয়েটাকে একযোগে মহাসমারোহে ভোগ করি অনেক দিন।
আমাদের দেখলে ও শরীর থেকে একে একে সব বস্ত্র খুলে ঢিল দিয়ে ফেলে দিত। 
নিরাভরণ শরীরে শুয়ে পড়ত।
কখনো চিৎ হয়ে।  কখনো উপুর হয়ে।
যখন চিৎ হয়ে থাকত আমরা কেউ ওর  ঊরুসন্ধি অভিমুখে আসা মাত্র কোনো কথা বলতে হতো না ; কোনো চাপ প্রয়োগ করতো না।
মেয়েটা উরু ফাঁক  ও জংঘার উত্থান করত।
দুই পা ফাঁক করে ও যোনি ফাঁক করে দিত।
উপুর হয়ে শুয়ে থাকলে কুকুরের মতো, হামাগুড়ি দেয়ার মতো করে একটা আসন বানিয়ে দিত।
যোনি আমাদের বাড়ি দিত।
নারীটা গর্ভবতী হয়ে গিয়েছিল। আমরা গর্ভবতী অবস্থায় ওকে সম্ভোগ করেছিলাম। গর্ভপাত হয়ে যায় মেয়েটার। মেয়েটার চোখে দু’ফোটা তখন অশ্রু ছিল। পুঁতির মতো জ্বলজ্বল ঘুম ভেঙে যায় মধ্যরাতে। তখন আর ঘুম আসে না।
সাইরেন বাজাতে বাজাতে অ্যাম্বুলেন্স নির্জন রাতে শূন্য রাজপথ দিয়ে দ্রুতবেগে যায়। হয়তো আমাকে বহন করে নিয়ে যায় এই অ্যাম্বুলেন্স।
মৃতরাতে জেগে উঠে আমি কি বারান্দায় গিয়ে বসি ? 
আকাশের দিকে তাকাই।
আকাশে কী অজস্র নক্ষত্রবীথি দেখি।
রহস্যময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডও।
নক্ষত্রের পতন চোখে পড়ে। কোনো কোনো নক্ষত্র স্থির। জ্বলজ্বল করতে থাকে।
আমার বাবা কী মরে গিয়ে এই নক্ষত্র।
আমিও একটা নক্ষত্রের মতো, এই রাতে, চন্দ্রালোকিত জেগে থাকি।
জেগে থাকব সারা রাত।
পৃথিবী এখন শান্ত।
কোথাও ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস নাই।
পৃথিবী শান্ত। ঘুমিয়ে আছে।
আবার একটা ভোর হবে। সূর্য উঠবে।
নৃত্য শুরু করবে নষ্ট চক্র।
আমি প্রত্যক্ষ করি

মানবিক পাশবিক
সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: মানবিক পাশবিক │ছোটগল্প│ সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
মানবিক পাশবিক │ছোটগল্প│ সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s16000/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiQ_SLPx8jtMMnOq8PGfHW9iOovZF4A35RxxmruUDS1YvWU-fBE9lMqJlVDUSqY-D2IQwblF4u8XiVziPfmbnW0jTqYviYVFbaqZWxpjaxh0axe4S0PuzuS6xH7aJZq-fz7dnqBsxpFJv2QsJTOogzvPKsv9KZ1mc94KA-V4sx2HeKvvQ7FrjGAbYY7M7Y/s72-c/Syer%20Riazur%20Rashid%20bindumag.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2023/11/syed-riazur-rashid-short-story-manobik-pashobik.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2023/11/syed-riazur-rashid-short-story-manobik-pashobik.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy