সিমোন দ্য বোভোয়ার
ফরাসি লেখক সিমোন দ্য বোভোয়ার {পুরো নাম: সিমন লুসি এর্নেস্তিন মারি বেরত্রঁ দ্য বোভোয়ার (ফরাসি: Simone Lucie Ernestine Marie Bertrand de Beauvoir)} এক নামে অনেক পরিচয় ধারণ করেন। তিনি বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক রাজনৈতিককর্মী, নারীবাদী এবং সামাজিক তত্ত্ববাদীও। তিনি অবশ্য নিজেকে দার্শনিক বলে মানতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু নারীবাদী অস্তিত্ববাদ এবং নারীবাদী তত্ত্বের ওপর তাঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। সিমোন দ্য বোভোয়ার উপন্যাস, প্রবন্ধ ও জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন। এ ছাড়া দর্শনের ওপর লিখেছেন পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা। লিখেছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে নানা রকম লেখা। নারীর ওপর দমন-পীড়নের বিশ্লেষণী গ্রন্থ ‘দ্য সেকেণ্ড সেক্স’ তাঁকে অমর করে রেখেছে। পরবর্তী সময়ের নারীবাদী চেতনার প্রেরণার মতো কাজ করেছে তাঁর লেখা। উপন্যাস ‘শি কেম টু স্টে’ এবং ‘দ্য মান্দারিনস’ তাঁকে বিশ্বপাঠকের কাছে প্রিয় লেখকে পরিণত করেছে।
সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯০৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নেন লেখক হবেন। শৈশবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা চলাকালীন তিনি মায়ের কাছে ধর্ম শিক্ষা নেন। কিন্তু তরুণ বয়সেই তিনি নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা দেন। ভর্তি হন ফ্রান্সের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সোরবোর্নে। সেখানে পরিচয় হয় বিখ্যাত দার্শনিক জ্যাঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে। ১৯২৯ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি দর্শনে এগ্রিগেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সেখানে থিসিস করেছিলেন দার্শনিক লাইবনিজের ওপর। একই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন জ্যাঁ পল সার্ত্র। সে সময় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব, প্রেম ও গুরু-শিষ্যের জটিল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯৪৩ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের পটভূমিতে সিমন এবং সার্ত্রের জটিল সম্পর্ককে কেন্দ্র করে লেখেন প্রথম উপন্যাস ‘সি কেম টু স্টে’। ১৯৪৫ সালে সিমনের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘লা সেং ডেস অট্রিস’ প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮২ সালে ক্লাউদে চারবলের পরিচালনায় এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘হেলেন’। লিটলম্যাগ বিন্দু bindumag.com
সিমোন দ্য বোভোয়ার জীবনী পরিচিতি Simone deBeauvoir
১৯৫৪ সালে সিমন প্রকাশ করেন আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘লেস মেন্ডারিন’ বা দি ম্যান্ডারিন। এর পটভূমি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষকাল। এখানে চরিত্র হিসেবে এসেছে সিমোন দ্য বোভোয়ার এবং সার্ত্রের নিকটজন, বন্ধুমহলের অনেকে এবং দার্শনিকদের কেউ কেউ। এখানে তিনি অকপটে তুলে ধরেছেন আমেরিকান লেখক নেলসন আলগ্রেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা। উপন্যাসটিতে সিমন তার নিজের এবং সার্ত্রের অনেক ঘটনাই তুলে এনেছিলেন অনেকটা রূপক আর ব্যাঙ্গাত্মকভাবে। উপন্যাসটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
সিমোন দ্য বোভোয়ার জীবনী পরিচিতি Simone deBeauvoir
১৯৪৯ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় তার সবচেয়ে প্রভাবশালী দার্শনিক গ্রন্থ ‘দি সেকেণ্ড সেক্স’। বইটিতে তিনি লিঙ্গ বৈষম্যের ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। ইতিহাসের আলোকে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এ বইতে। বইটি তিনি দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন। প্রথমটি ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড মিথস’, দ্বিতীয়টি ‘লিভড এক্সপেরিয়েন্স’। বইটিকে সিমোনের সেরা বইগুলোর অন্যতম মনে করা হয়। নারীবাদী দার্শনিক গ্রন্থেরও সেরা বই হিসেবে গণ্য করা হয় এটিকে। কারণ তাঁর এ বইয়ের প্রভাবেই তৈরি হয় নারীবাদী প্রচার-প্রসারের দ্বিতীয় জোয়ার। ‘নারী হয়ে জন্মায় না কেউ, বড় হতে হতে নারী হয়ে যায়’—এ কথাগুলো উচ্চারণ করার মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো শারীরিক লিঙ্গপরিচয় এবং সামাজিক ও ঐতিহাসিক লিঙ্গপরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, নারীর ওপর দমন-পীড়নের মৌলিক উৎস হলো ঐতিহাসিক ও সামাজিক নিয়ম-কানুন। তিনি বলেন, ‘নারীরা দ্বিতীয় লিঙ্গ—তার কারণ হলো, তাদের পুরুষের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা হয়। উদাহরণ হিসেবে দেখান—অ্যারিস্টটল বলেন, ‘তাদের মধ্যে কিছু গুণের অভাব আছে বলেই নারীরা নারীসুলভ।’ সেইন্ট টমাস বলেন, ‘পুরুষের ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা বা ঘাটতির নাম হলো নারী।’ তবে বোভোয়ার নিজে মনে করেন, নারীরা পুরুষের মতোই নিজের পছন্দের বিষয় ও পথ বেছে নিতে পারে। নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম তারা।
১৯৫৮ সালে সিমন চার খণ্ডে তার আত্মজীবনী শেষ করেন- মেমোয়ার্স অব এ ডিউটিফুল ডটার, দি প্রাইম টাইম, ফোর্স অব সারকামস্টেন্স এবং অল সেইড অল ডান। ১৯৭৯ সালে প্রগতিশীল নারীদের জীবন অবলম্বনে লিখেন ছোটগল্প ‘দ্য থিংস অব দি স্পিরিট কাম ফার্স্ট’। নারী অধিকার বিষয়ক তাঁর আরেক ছোটগল্পের সিরিজ ‘দি ওমেন ডেস্ট্রয়েড’ বেশ সাড়া জাগায়। লিটলম্যাগ বিন্দু bindumag.com
১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘দি এথিক্স অব এমবিগিউটি’। অনেকে বলেন এটি সার্ত্রের বিখ্যাত ‘বিং এন্ড নাথিংনেস’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এ প্রসঙ্গে সিমন বলেন, তিনি সার্ত্রের চিন্তা এবং দর্শন দ্বারা কখনোই প্রভাবিত ছিলেন না। তিনি নিজেকে একজন দার্শনিকের চেয়ে বরং সাহিত্যিক হিসেবেই দেখতে বেশি ভালোবাসতেন। ১৯৮১ সালে সার্ত্রের জীবনের শেষ বছরগুলোর স্মৃতি নিয়ে প্রকাশ করেন ‘এ ফেয়ারওয়েল টু সার্ত্র’। লিটলম্যাগ বিন্দু bindumag.com
তার ‘দি সেকেন্ড সেক্স’কে ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ নামে অনুবাদ করেন হুমায়ুন আজাদ। এ ছাড়া তার আরও কিছু বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল সিমন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
প্রথমে মনে হলো বিন্দুতে এমন লেখার দরকার কী?
উত্তরমুছুনপরে মনে হলো, এই বোকাচোদার দেশে ঠিকই আছে৷ এগুলোও তো জানে না৷ লেখালিখি করে, বিরাট লেখক ভাবে নিজেকে, এমন অনেক রথি দেখছি জ্ঞানের হাড়ি ফকফকা৷