.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

নীলা সয় না সকলের, নীলার কি সকলকে সয়?

বিন্দু। বাংলা ভাষার লিটল ম্যাগাজিন। বাঙলাদেশ থেকে অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
শীতের সন্ধ্যায় কোনো এক জাদুকর আমার পেছন পেছন আসে; আমায় কুয়াশার গল্প বলে; আমায় শরীর খুলে দেখায় মন; আমায় খারাপ খুলে দেখায় নীলকমল; আমি নীল হয়ে যেতে যেতে বলি, ‘আমার কিছু ভালো লাগে না; আমায় মা, বাবার কাছে নিয়ে যাবে?’

সে হাসে..বলে, ‘বয়স কত হলো?’

আমি উদাসভাবে বলি, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন আর সবচেয়ে নবীনকে সন্ধ্যার বাতাসে মেশাও.. দেখবে, আজো আমি বাবার কনুই ধরে ঝুলে বনবন বনবন ঘুরছি.. মায়ের শাড়িতে মা মা গন্ধ পাচ্ছি.. গুলঞ্চলতায় আমার প্রথম প্রেম দোল খাচ্ছে.. প্রতিটি প্রেমকে হারাতে হারাতে আমি আসলে মৃত্যু পেরোচ্ছি.. জীবন মাপছি স্বপ্নে..!’

‘ঠিক কী চাও?’ জাদুকর বলে..

‘বাবা, মা আর একটি দোদুল শৈশব..’ আমি বলি..

পিঠেপুলির গন্ধে নরম হয়ে আসে পৃথিবী..
‘আমি দেখি, বাবা মায়ের থালা ভরে উঠছে আমার হাতে গড়া পিঠেয় আর তাঁদের হাতে গড়া আমার অশ্রুতে..’
শীত আমার ভালো লাগে না.. আমি উতর হাওয়ায় কণ্ঠ রাখি আর নীরব পাখির মতো নিষ্পাপ হয়ে যেতে থাকি আকাশে আকাশে..
জাদুকর বিরক্ত মুখে প্রস্থান করেন..আমলকী-পাতায় আমার ছায়া পড়ে বিরামহীন..
     [জাদুকর]
অনুভবের গাঢ়তা আর প্রকাশের পটুত্বে সৃষ্টি হয় কবিতার। বলছিলেন কবি শ্বেতা চক্রবর্তী। সমসাময়িক বাংলা কবিতার এই আরএক বিস্ময়। অনেকটাই আড়াল হয়ে আছেন তিনি আমাদের থেকে। আর আমরা তাঁর কবিতার নিমগ্ন পাঠক যারা, খুঁজে খুঁজে পড়ি তাঁর কবিতা। ফেসবুক পেজে কিংবা সিগনেট থেকে প্রকাশিত কবিতাবইগুলোয় একেবারে আলাদা, নিজস্ব স্বরের তাঁর কবিতাগুলো আমাদের অবাক করে দেয়। জীবন অভিজ্ঞতার গাঢ় অনুভব আমাদের হৃদয়ে বয়ে যেতে যেতে যাপিত জীবনের শরীর খুলে আমাদের প্রেমকে আমাদের মৃত্যুকে তুলে ধরে দিক্-চিহ্নহীন অন্ধকারের অথৈ-এ। এই মধ্য বয়সে এসে, ডান দিকে ঢলে পড়ে, শীতের সন্ধ্যার কুয়াশায় আমাদের মন যেন ক্যামন করে, কিছু ভালো লাগে না। ফেলে আসা শৈশব কৈশোর আমাদের কাতর করে। মনে পড়ে ৭৭ সেকেন্ডের ইরানি ওই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্রটির কথাও। ‘মা’। সিনেমার ওই বয়স্ক লোকটাই তো আমি। মাটিতে মায়ের কোলের বড়ো একটা ছবি এঁকে শেষে পরম প্রশান্তির আশ্রয় ওই কোলেই জড়ো হয়ে শুয়ে পড়ি। আমাদের রক্তের ভেতর উৎসে ফিরে যাবার যে আকুলতা, বয়সের সাথে সাথে তা গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। জীবনের প্রতিটি প্রেমকে হারাতে হারাতে আমরা আসলে মৃত্যুকেই পেরিয়ে যাই। আমাদের চাওয়া এখন পরম চাওয়া। দোদুল শৈশব। কিন্তু সেখানে ফিরে যাবার কোনও পথ কি আর আছে? সেরকম কোনও জাদুকরের খোঁজে আমরা ঘুরে বেড়াই পৃথিবীর পথে। খুঁজে ফিরি চাবি। মনে আছে, ট্রাংকপট্টি রোডের সেদিনের সেই চাবিওয়ালা আমাকে তার চাবির গুছোগুলির সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, স্যার, তালাচাবি লাগবো? আমি তাঁকে বলতে চেয়েছিলাম, তালা লাগবে না ভাই, তবে, জীবনের যে পথগুলো রুদ্ধ হয়ে গেছে আমাদের বয়সের সাথে সাথে, সেইসব পথে যদি আবার হেঁটে যেতে পারতাম! যদি খুঁজে পাওয়া যেত তার চাবি! সেই চাবি আছে? কিন্তু বললাম, আপনার মাস্কটা একটু খুলুন। একটা ছবি তুলি। জীবনের ছবি। যে জীবন নদীর জলের মতোই এগিয়ে যায় তার অমোঘ পরিণতির দিকে। হ্যাঁ, জীবন একটা নদীই যেন। মনে পড়ে আগের রাতে কাহ্‌লিল জিব্রানের একটা কবিতা অনুবাদ করতে চেষ্টা করেছিলাম। কবিতাটির নাম, ‘ভয়’। নদীকে নিয়ে কবিতা। নদী তার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সাগরের মোহনায় এসে, এক মুহূর্তের জন্য যেন থমকে যায়। সামনে অজানা বিশাল সমুদ্র। হঠাৎ কী এক ভয় এসে গ্রাস করে তাকে। মনে হয়, এক্ষুনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সে। বিলীন হয়ে যাবে ব্যাপক জলরাশিতে মিশে। ইচ্ছেয় কাতর হয় সে ফিরে যেতে। কিন্তু ফিরে যাওয়া অসম্ভব। বাস্তবিক কেউ কি ফিরতে পারে? ফেরার কোনও পথ নেই। আমরা জানি। তবুও মন ফিরতে চায়। উতর হাওয়ায় কণ্ঠ রাখে। নীরব পাখির মতো নিষ্পাপ হয়ে যেতে থাকে আকাশে আকাশে।

বাবু হে, জীবন কাকে বলে?

কত কত জন্মের আগের কথা মনে পড়ে আমাদের! তাঁর ‘বেয়াধি’ শিরোনামের কবিতাটিও পড়তে পড়তে আমরা ডুবে যেতে পারি এক জন্মাজন্মের আবহে। প্রিয় পুরুষের তরে নারীর প্রেম-ব্যাকুলতা এখানে একটি আলাদারকম বেদনাময় দ্যোতনার সৃষ্টি করেছে। তাঁর সরাসরি রোম্যান্টিক কিছু উচ্চারণ—‘তোমার বুকের বালিশে আমার এ ঘনঘোর মাথা’ কিংবা ‘আমার তোমাকে দেওয়া আকুল ব্যাকুল চুমুগুলি আকাশে অসংখ্য তারা হয়ে ফুটে উঠেছিল’—যেমন বিমোহিত করে আমাদের, তেমনি তার পরিণতি—‘মাছেরাও গর্ভবতী হতে চাইছিল তোমার গলিত ধাতু পেয়ে, শুশুকেরাও…’ আমাদের বিস্মিত করে। এমন অভূতপূর্ব কথা আমরা শুনেছি কি বাংলা কবিতায় আগে? অবাক হই পড়ে—

আমরা অবিবাহে মরে যেতে যেতে
আবার নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরছিলাম
আমাদের শরীর দুটিকে,
আমাদের বিরহ দুটিকে,
আমাদের মিলন দুটিকে…।
 
পরদিন জেলেরা যে দেহ পেয়েছিল, তা জড়াজড়ি
নারী-পুরুষের,
প্রশান্ত সাগর ভরে
তোমার দেহের ক্ষীরে
সাগরের নোনা স্বাদ
আরো বেশি নোনা হচ্ছিল…!
মাছেরাও গর্ভবতী হতে চাইছিল তোমার গলিত ধাতু পেয়ে,
শুশুকেরাও…¡
কেবল আমার সে সুযোগ ছিল না,
দীর্ঘশ্বাসে ভরেছিল
ভোরের সমুদ্রতীরখানি…¡

চেয়ে দেখো, সে বিষাদিণীকে
এই জন্মে চিনতে পারো কিনা,
শরীরে তোমার গন্ধ,
যোনিতে তোমার ক্ষতদাগ,
বুকের লালিম তিলে তোমার ওই জিভের ডগার লালটুকু…!!
     [বেয়াধি] 
পুরুষের পরম নাভির মধ্যে বাম স্তনবৃন্তখানি ডুবে যায় কার?

কবি শ্বেতা চক্রবর্তী ১৯৬৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় 
জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য বই: স্নান; বুকে এসো, রূপবান; 
ধারা সরস্বতী; বরিখবিরহ; মর্মরিত রাত্রি তখন কথকতা; সুধাপারানি; 
নিখিলনাথ নিরালা; ক্ষরিতক্ষরণ সম্ভবা; শ্রেষ্ঠ কবিতা... ইত্যাদি।
‘সারাজীবন কবিতা লিখেও কোনো কোনো কবি বুঝে উঠতে পারে না যে কবিতার যৌনতা আর শরীর কবির নিজের অভিজ্ঞতা নাও হতে পারে।’ কবিতায় যৌনতা বিষয়ে কারও কারও মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শ্বেতা চক্রবর্তী একবার এইরকম কিছু কথা পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। লিখেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতকে বিশ্বগত না করতে পারা, সারাজীবন তেলের ক্যান নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কবিরা এমন বলেই থাকে। আমার কবিতার যৌনতা নিয়ে যারা আমায় বিচার করে, তাদের ঘটে বুদ্ধির অভাব ঘটেছে। আর নিজের অক্ষমতা যে নিজে জানে, সে অন্যের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। এরা হল দু কান কাটা। মেয়েরা অক্ষম হয় না। তাই তাদের যৌনতা বিচার করতে গেলে অশ্বডিম্বই মিলবে। যে নিজেই কিম্পুরুষ, তার যৌনতাই বা কি, শরীরই বা কি। কেবল বহু নারীকে নিয়ে মিথ্যে প্রলোভনে জড়িয়ে এর কাছে ওকে, তার কাছে আর একজনকে নিয়ে বলাতেই এদের কৌশল একদিন ধরা পড়ে। তখন বিবমিষা জাগে! এতদিনের এত বিশ্বাস ভেঙে পড়ে। এরা অতি সচেতন। যে মেয়েকে বলে রাবণের চেড়ি, তাকেই এরা অঙ্কশায়িনী করে। অতি চালাক হবার সুবাদে এরা ক্ষমতাশীলকে তেলিয়ে চলে। ক্ষমতাশীলের কবিতায় যৌনতা দেখলেও তার বয়স দিয়ে, ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে কিন্তু তার কবিতাকে গুলিয়ে ফেলে না। ফেললেও রটায় না। কিন্তু রটাতে কতক্ষণ? তাই সাধু সাবধান! এরা কখন কার ঘরে সাপ ঢোকাবে, কেউ জানে না। বন্ধুর ছলনায় এসব শত্রু সামনে আমায় মহাকবি বলেই পেছন ফিরলে আমার কবিতার শরীরবোধের সঙ্গে আমায় মিলিয়ে কদর্য কথা বলবে পরকীয়ার প্রেমিকাকে! পুরুষের অক্ষমতা দোষের নয়। তবে অক্ষমতা তাকে যদি নীচ, কামুক, মিথ্যেবাদী করে তোলে তার নাম প্রকাশই উচিত।’

বাংলা কবিতায় বা সাহিত্যে যৌনতার মুক্তি ঘটে গেছে বহুকাল আগে। কিন্তু মানুষের যে প্রাতিষ্ঠানিক রক্ষণশীল রুচি, তার কি মুক্তি ঘটেছে ততটা আদৌ? গত শতাব্দীর হাংরি কবিদের লিখায় আমরা বিগত প্রায় ৬০ বছর ধরে দেখেছি এই মুক্তির প্রক্রিয়া। যৌনতা এখন অন্যসব অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলির মতোই স্বাভাবিক। আলাদা করে একে চিহ্নিত করার কিছু নেই। আমরা এখন অবলীলায় পড়তে পারি, উচ্চারণ করতে পারি—

মেয়েদের দুই স্তনের ওপর
দু খানি কালো আঙুর ঝুলিয়ে দিয়ে
ঈশ্বরও জিভের
স্বাদবদলের
সুযোগটুকু রেখে দিলেন নিবিড়ে!
কিংবা,

পুরুষের চোখের পাতায় নারীর স্তনবৃন্তদুটি ওগো

কী আকুল হাওয়ায় দোলে আর দোলে..

সুবর্ণরেখার জলে স্বর্ণরেণু ছই পায়, 
তল পায়, অতল পায় না.. 
কিংবা,

স্নানের সময় যে সামনের থেকে জড়িয়ে ধরে, সে শুধু মানুষ.. 
যে পেছনের থেকে জড়ায়, সে দেবতা: 
নিশ্চোখের অভিশাপে কবিতা রচিত হয়, হায়..
শাণিত ছুরির মতো বিপজ্জনক-হিমশীতল এইসব কবিতা আমরা পড়ি আর পড়ি আর জীবনের ভেতর দিকের আরও গভীরে মগ্ন হই। আমাদের ‘ঘুঙুর কখনো বসন চেপে ধরে, / বসন কখনো ঘুঙুর.../ পৃথিবীতে নরনারী আসে আর যায়, / আঁকড়ে ধরার পরও কচি শালপাতায় দীর্ঘশ্বাস ওঠে, / হাওয়ায় মিলিয়ে যায় আমাদের সব গল্প, / সোঁদা গন্ধে শুষনি গাঁয়ের দিকে, সব...’। চাবি খুঁজি। জাদুকর খুঁজি। আমাদের কথা হয়। আমরা বিস্মিত হই অতিপ্রাসঙ্গিক অন্তরাত্মার আহ্বানে, আমাদের নারীদের বিস্ময়ে—

কেন যে এমন তীব্র রূপ হয় কিছু পুরুষের! 
অভিনয় করতে করতে, তলপেট চাপতে চাপতে সহসা

সুমেরু দুটি কেঁপে ওঠে অর্থহীনতায়!
কিংবা,

অতএব, আমি ভালোবাসার কবিতাই লিখবো,
উন্মাদিনী যখন তখন শাড়ি খুলে ফেলে।
সে বাস্তব-বঞ্চিত।
সে তোমাদের ঘৃণা, তোমাদের কৌতূহল, তোমাদের উল্লাস, তোমাদের হস্তমৈথুন।
কিন্তু কোনও কবিকে তার কবিতার যৌনতা নিয়ে বিচার করতে চাওয়া কোনও কাজের কথা কি? বরং নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক। কেনইবা কোনও কবিকে কোনও নির্দিষ্ট বিশেষণে অভিহিত করতে হয়? কেন বলতে হবে নজরুলকে বিদ্রোহী কবি? কিংবা জীবনানন্দ রূপসী বাংলার কবি, নির্জনতার কবি? হ্যাঁ, বুদ্ধদেব বসুই প্রথম এইরকম অভিধায় আবদ্ধ করতে চেয়েছেন। যার প্রতিবাদে তখনই তরুণ কবিরা সরব হয়েছিলেন। জীবনানন্দকে যে নির্জনতার/রূপসী বাংলার কবি বলবে তার মতো নির্বোধ আর নেই। আমরা জানি, কোনও কবিকেই এইরকমভাবে অভিধার গণ্ডিতে আবদ্ধ করা যায় না। তবে কি এই জন্য যে তাঁর সকলের সাথে সাধারণ সামাজিক হয়ে উঠতে না-পারা—তাঁর একা থাকতে চাওয়ার আত্মমগ্নতার ধ্যানকে ভাঙতে না-পারা—কিংবা তাঁর ‘সমগ্র’টাকে আমাদের ছুঁতে না-পারাই এর জন্য দায়ী? বুঝতে গিয়ে পুরো বুঝতে না-পারা, ধরতে গিয়ে পুরো ছুঁতে না-পারার আমাদের অক্ষমতাকে ঢাকতে আমাদের অতি উৎসাহী আবেগের/ভালবাসার এই আয়োজন। মাঝেমধ্যে ভাবতে কৌতুক বোধ হয়, কী হতো যদি বুদ্ধদেব বসুরা জানতেন মানুষ জীবনানন্দকে পুরুষ জীবনানন্দকে, যিনি তাঁর কোনও এক ডায়রির পাতায় টুকে রেখেছিলেন সেইসব নারীদের নাম, জীবনের পরিচিত যে-সব নারীদের কল্পনা করে নিয়মিত মাস্টারবেট করতেন তিনি।  

শ্বেতার কবিতার প্রতিটি অক্ষর তেজস্বী আর বেগবান। হ্যাঁ, শ্বেতা চক্রবর্তী ‘বন্ধুর-ছলনায়-কিছু-শত্রু’কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন তাঁর ক্ষোভের ওই কথাগুলো। যুগে যুগে এমন মূর্খের দল থাকেই। যারা কবিতার শরীরবোধের সঙ্গে কবিকে মিলিয়ে কদর্য কথা বলবে পরকীয়ার প্রেমিকাকে। কিন্তু আজ আমাদের দৃষ্টি তাদের দিকে নয়। এতোটা অপচয়ের সময় আমাদের নেই।

শরীর করেছো শুধু, আদরের অমৃত করো নি

শ্বেতা আমাদের কবিতায় ব্যক্তিগতকে বিশ্বগত করার কথাও বলেন। তাই কবিতাকে বুঝে নিতে আমরা ভাবতে থাকি কবিতার ভেতর দিয়ে কবির ব্যক্তিগত জীবনের দিকে অগ্রসর হওয়াটা কতটা যৌক্তিক আর ফলপ্রসূ হতে পারে? আমরা তো জানি ব্যক্তিগত থেকে বিশ্বগতের দিকে যাওয়ার কথা। আমরা দেখেছি, যে কবিতা যত বেশি সার্বজনীনের দিকে এগিয়েছে সে কবিতা তত বেশি কবিতা হয়ে উঠেছে। তাই কবির ব্যক্তিগতের দিকের চেয়ে কবিতাকে বুঝে নিতে পাঠকের আপন ব্যক্তিগতের দিকে তাকানোই উপযুক্ত বলে মনে হয়। পাঠক যত বেশি আপন জীবন অভিজ্ঞতার সাথে পঠিত কবিতাকে মিলিয়ে নেবেন সে কবিতা তত বেশি তার আপন হয়ে উঠবে। আমরা কবিতায় কবির আস্তিত্বিক বেদনার কথাও জেনেছি। কিন্তু সেই বেদনা কি কবির একার? কবিতা পড়তে পড়তে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে অন্তর্জগতে পাঠক নিজেও কি কবির সাথে কবির কবিতার সাথে সহ-মৃতের ভূমিকায় আবিষ্কার করেন না নিজেকে? যদি না-পারেন তবে কতটা ছুঁতে পারলেন কবিতাটিকে সেই প্রশ্ন থেকে যায়। আবার উল্টোভাবেও, যদি না-পারেন কোনওই পাঠক, সেটা তবে কতটা বিশ্বগত হলো কতটা কবিতা হয়ে উঠল সেই প্রশ্নও ওঠে। তখন কবিতাকে মনে হতে পারে অনুপলব্ধ মিথ্যা উচ্চারণ। নির্ভাষ ভাষার আস্ফালন। শ্বেতা, এইসব ভাষার আস্ফালনের অনেক ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছেন তাঁর কবিতাকে। তাঁর চেতনাকে। বিশেষ মুহূর্তে পাঠকের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে একেবারে শারীরিকভাবে স্পর্শযোগ্য হয়ে ওঠে প্রায়শই তাঁর কবিতা।

আমাকে তোমরা পুজো করেছ, করেই
দু বুক টেনে দেখে নিয়েছ কতটা নুয়ে পড়ি।
 
আমাকে তোমরা পুজো করেছ, করেই
নাভির মধ্যে ছুঁচ গেঁথেছ, কতটা রক্ত পড়ে।
 
আমি বলেছি দু হাতে পেট চেপে,
ওখানে আমার মেয়ের গন্ধ, বাঁচাও, ওকে বাঁচাও।
     [অলক্ষ্মী]
আবার, সমগ্র আস্তিত্বিক দৃঢ়তা দিয়েই তিনি আত্মোচ্চারণ করতে পারেন,—
 
তোমার শিরদাঁড়ার চেয়ে তুমি শক্ত..
বহুযুগের হারিয়ে যাওয়া তোমার জমিদার ঠাকুর্দার কালো ঘোড়ার চেয়ে তুমি ঢের বেশি চাবুক..
তোমার ভ্রমণ-লালস জঙ্গলের চেয়ে তুমি দুর্গম..
তোমার হাড়কাঁপানো ভৌতিকের চেয়ে তুমি বেশি ভয়ানক..
তুমি জানো, টাইটানিকের চেয়ে বিপুল ভুজঙ্গ তোমার আবেগ..
     [নারী]
কিছুদিন আগে প্যারিসে এক বিখ্যাত আলোকচিত্রী রেনে রবার্টের গভীর রাতে রাস্তায় ঠাণ্ডায় জমে মরে যাওয়ার খবরে বন্ধু এমদাদ রহমান খুব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে বলেছিলাম এমন বহু ঘটনা ঘটে চলেছে নিয়মিত পৃথিবীতে। উদাহরণ দিয়েছিলাম কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে আসতে গিয়ে ঠাণ্ডায় জমে প্রাণ হারান ভারতীয় একটি পরিবারের সবাই। জীবিকার খোঁজে এইরকম অনেক প্রাণই অকালে ঝরে যাচ্ছে নির্মমভাবে। ক’টার খোঁজ রাখি আমরা? সেখানে দীপেনদা এমদাদের হয়ে উত্তর করলেন, এমদাদ প্যারিসে থাকেন, সেখানকার ঘটনা তাঁকে স্পর্শ করবে এটাই স্বাভাবিক। পুরো পৃথিবীর স্তব্ধতাকে ধারণ করা তো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সাথে সাথে আমার মনে পড়েছিল জীবনানন্দের কথা। পুরো পৃথিবীর স্তব্ধতাকেই কি ধারণ করেছিলেন তাঁর কবিতায়! আমার কথা ছিল, আমাদের দৃষ্টি তো স্থানীয়ের মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্বের দিকেও, যেমন বর্তমানের মধ্য দিয়ে চিরকালের দিকে। তাহলে পুরো পৃথিবীর স্তব্ধতাকে কেন ধরতে পারবো না আমরা। আমাদের কবিতা কি শুধুই স্থানিক কবিতা? শুধুই বর্তমানের? তা তো নয়। হ্যাঁ, ভাষা বা অভিজ্ঞতা বর্তমানের ঠিকই, কিন্তু সে ইচ্ছে করলে ধরে রাখতে পারে চিরকালের স্তব্ধতাকেও, পুরো বিশ্বের স্তব্ধতাকেও। সেইরকম কবিতাই তো কবিতা। সে’রকম কবিতা পড়লে মাঝেমধ্যেই যে অনির্বাচ্য অনুভব হয়, তার তুলনা অন্য আর কীসেইবা হতে পারে কেবল কবিতা ছাড়া। 

প্রথাগত কবিতার গড়নের চাইতে কবিতার গদ্য-গড়নেই শ্বেতা চক্রবর্তীকে স্বচ্ছন্দ পাই আমরা। প্রশ্নভরাতুর আত্ম-আবিস্কারের ভেতর দিয়ে দারুণভাবে বর্তমানকে চিরকালের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দেন তিনি। অবলীলায় তা হয়ে ওঠে ‘A poem should not mean / But be’ এর মতোই। ‘কোলে শোয়ালে দেবতারাও শিশু হয়ে ওঠে…/ মানুষ তো কোন ছার…! / আর তুমি?’

গতকাল রাতে আমার বাড়ির অদূরের বনে কাশফুলের যোনি কে যেন ছিন্নভিন্ন করে চলে গেছে।
কাশফুল প্রতিবাদ করেছিল সাদা পরাগ উড়িয়ে, পরাগখসা ডাঁটা দিয়ে মেরে,
কিন্তু নারী তো!
আর বাস ওর জলের কাছাকাছি।
সকালের আলোয় পড়ে আছে ধর্ষিতা কাশফুল।
কোনো পচন নেই।
নারীও কাশফুল মাত্র।
দিন যায়, বিপদ, দলন।
দূরের কুঁড়ের মধ্যে তার একজন প্রেমিক রয়েছে,
যে আজও বিকেলে আসবে,
কাশকুসুমকে জানাবে, প্রতিবাদ হোক্,
কিন্তু ভেঙে পড়া নয়।
কারণ, সমাজ যাই বলুক,
শুকিয়ে যায়, নুয়ে পড়ে,
কিন্তু
কাশফুল কখনো পচে না।
     [অপাপবিদ্ধ]
মনে পড়ে…খুব মনে পড়ে…

শ্বেতার যে কবিতাটি আমাকে বিহ্বল করে রেখেছিল বেশ কিছু কাল তার নাম ‘মায়া’। একজন পাঠক হিসেবে আমার পাঠ/পূর্ব-পাঠ, আমার জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা, আমার জানা জ্ঞান-বিজ্ঞান আর অনুভবের ছোট্ট জগতে ঘুরপাক খেতে থাকি কবিতাটিকে নিজের করে বুঝে নিতে। মনে আসে জীবনানন্দের ‘যেইসব শেয়ালেরা’, মনে পড়ে ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটি। যেখানে আমরা জেনেছি, ঘাইহরিণীর কথা। জেনেছি, সেইসব শেয়ালের কথা। জেনেছি ওদের সেই বলতে না-পারা প্রকাশ করতে না-পারা বিস্ময়ের মতোই, জীবনের পারে তোমারে দেখে আমারই স্নায়ুর অন্ধকারে নিরভিসন্ধি কেঁপে ওঠে। জীবনানন্দের ওই চেতনাটুকু বুঝে নিয়ে, তারে অতিক্রম করতে করতে ঢুকে যাই গুহার ভেতরে। মনে আসে জার্মান লেখক এর‍্যিখ ফন দেনিকেন-এর ইউটিউবে আপলোড করা সেই আলোচনাগুলোর কথা। যার নাম ‘চেরিওটস অব দ্য গডস’। যেখানে সম্ভাব্য প্রমাণ সহ আলোচনা করেছেন ভিনগ্রহের মানুষ কিংবা প্রাণীদের ইঙ্গিত-কথা। যারা হয়তো পৃথিবীতে বিভিন্নরকম নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন অতীতে। জৈব-নিরীক্ষা। মানুষ ও ঘোড়া, মানুষ ও মাছ, কিংবা অন্য আরও প্রাণীর সাথে অন্য আরও প্রাণীর সংকর তৈরির। পাঁচ/দশ/কুড়ি সহস্র বছর আগের এইসব নিরীক্ষার কিছু কিছু নজির মাঝেমধ্যেই আধুনিক মানুষের কাছে ধরা দেয় পরম বিস্ময় নিয়ে। আমাদের প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে আমরা জানতে পাই রাবণ, মহিষাসুর কিংবা গণেশের কথা। জানতে পাই মত্‌সকুমারী কিংবা ঘোড়া-মানবের কথা। দেখতে পাই স্ফিংস এর মূর্তি। কিংবা মিশরের ওইসব, মানুষের দেহে অচেনা প্রাণীর মাথা নিয়ে অদ্ভুত সব দেয়ালচিত্র। এইসবই ঘুরপাক খেতে থাকে মনে ও মননে। হরিণ—প্রকৃতির সুন্দর ও নিষ্পাপ। গুহার ভেতরে যার সাথে বুদ্ধিমান মানুষের আচমকা দেখা হয়ে যায়। কিন্তু হরিণ কেন গুহায় ঢুকে গেল? গুহায় তো বাঘের মতো শক্তিশালীরা থাকে। হ্যাঁ, বিশেষ পরিস্থিতিতে হরিণও গুহায় ঢোকে হয়তো। বাইরে অন্য পশুরা কাতর এবং কৌতূহলী। বাইরে শিকারী রাইফেল হাতে ঘুরে বেরাচ্ছে শিকারের খোঁজে। তারই তাড়া খেয়ে কি ঢুকেছিল হরিণ-জোড়া গুহায়? যেখানে সারারাত হরিণ ও মানুষের যৌথাচার হয়। পৃথিবীও প্রাশান্ত ছিল তখন। বুদ্ধিমত্তা আর নিষ্পাপ সৌন্দর্যের মিলন চলে সারারাত। হরিণ ও মানুষের সংগম। ফলশ্রুতিতে জন্ম হয় একটি নতুন প্রজাতির। টানা টানা, দীঘল দীঘল হরিণ-মানুষ। নিষ্পাপ সৌন্দর্যের বুদ্ধিমত্তায় ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে শাসন করবে যে।

কবিতাটি পড়তে পড়তে আমরা একটি ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে যাই, আমাদের স্বপ্নের পৃথিবীর দিকে। আমাদের অন্তর্গত আকাঙ্ক্ষা আর আশাই যেন প্রতিফলিত হয় কবিতায়। মানুষ, প্রকৃতি ও পশুর মধ্যে প্রেমপূর্ণ সহাবস্থান আর একাত্মতা। নতুন ওই প্রজাতিটি যেন বুদ্ধিমত্তা আর অনুভবের গাঢ়তায় সৃষ্ট আমাদের কবিতাই। কিন্তু হায়! ভোর হতেই যে ভবিষ্যতের শুরু সেই নতুন ভবিষ্যৎ আমরা রক্ষা করতে পারি না। বারবার ব্যর্থ হই।
 
গুহার ভেতরে ঢুকে যাওয়া হরিণ হরিণী জানতো না
ওখানে মানুষ আছে,
তারাই আসল হরিণকথা আর কথকতা।
গুহায় তবুও তারা সারারাত ছিল,
দুটি হরিণ হরিণী আর দুটি মানুষ মানুষী।
সারারাত বাইরের পশুগুলি ছিল কাতর ও কৌতূহলী।
সারারাত শিকারীর রাইফেল কাঁধ থেকে পড়ে যাচ্ছিল।
সারারাত চাঁদের মাথার খুলি বের করে নিয়ে ফের কারা যেন মায়াবশে জোড়া দিচ্ছিল।
পৃথিবী প্রশান্ত ছিলো হরিণ ও মানুষের ভিন্ন যৌথাচারে।
হরিণী ভোরের দিকে শুয়েছিলো মানুষটির বুকের ওপর।
মানুষীটি শুয়েছিল হরিণের দেহের নিচেই।
হরিণ আর মানুষীর মিলনে একটি নতুন প্রজাতি জানি পৃথিবীতে আসছে...
মানুষ আর হরিণীর মিলনে একটি প্রজাতি,
টানা টানা, দীঘল দীঘল প্রাণীরা একদিন পৃথিবী শাসন করবে।
হেমন্তের পাতায় পাতায় এ কী নীরব বসন্ত!
প্রিয়, অনুভব করো, আমাদের ফেলে দেওয়া সন্তানটি আসলে ছিল হরিণ-মানুষ!
ওই গুহাটিতে আমি-হরিণীর বুকে মাথা রেখে শুয়েছিলো তুমি-মানুষটি।
ভোরবেলা ছিল নতুন প্রাণীটির...
আমরা যাকে রাখতে পারি নি।
মনে পড়ে… খুব মনে পড়ে...
     [মায়া]
আচ্ছন্ন হই অদ্ভুত স্মৃতিকাতর বিষণ্ণতায়। যার নাম ‘মায়া’। মনে পড়ে…খুব মনে পড়ে। হ্যাঁ, কোনও কোনও ব্যক্তিগত স্পার্ক থেকেই কবিতার জন্ম মুহূর্তের সূচনা হয় ঠিকই। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে এই কবিতাটির মতোই সার্বজনীন হয়ে ওঠে তা। সকলের হয়ে ওঠে। যার সাথে কবির ব্যক্তিগতের কোনও লেশ আর থাকে না।

(২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২)

নীলা সয় না সকলের, নীলার কি সকলকে সয়?
ঋতো আহমেদ

মন্তব্য

BLOGGER: 3
  1. ঋতো আহমেদ।আপনার লিখিত প্রবন্ধটি খুব সহজ এবং সতেজ,সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. পাঠে ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। শুভ কামনা রইল।

      মুছুন
  2. খুব ভাল আলোচনা।- অমিতরূপ চক্রবর্তী

    উত্তরমুছুন
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: নীলা সয় না সকলের, নীলার কি সকলকে সয়?
নীলা সয় না সকলের, নীলার কি সকলকে সয়?
কবি শ্বেতা চক্রবর্তী ১৯৬৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখযোগ্য বই: স্নান; বুকে এসো, রূপবান; ধারা সরস্বতী; বরিখবিরহ; মর্মরিত রাত্র
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjddnL5wF34E1fxu5jrlS1i9A9c7HhC_Lbe9gUyi9Ca6ujgauS5xX7Qdibl1L4JtAHXyY-8pIGmbcjHtp3NlW9BXO5SPYno_9Fh5Ew6En54u2AUXXoi7CnDt8QivYLTidaw0Ta3Fl8VdaKbBvGgsXbt84Dv9tcPdHv4uNzX6tTSS7jv4X1-0lugFFfz/w320-h180/%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%A6.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjddnL5wF34E1fxu5jrlS1i9A9c7HhC_Lbe9gUyi9Ca6ujgauS5xX7Qdibl1L4JtAHXyY-8pIGmbcjHtp3NlW9BXO5SPYno_9Fh5Ew6En54u2AUXXoi7CnDt8QivYLTidaw0Ta3Fl8VdaKbBvGgsXbt84Dv9tcPdHv4uNzX6tTSS7jv4X1-0lugFFfz/s72-w320-c-h180/%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%97-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%A6.jpg
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2022/07/Article-Sweta-Chakroborti.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2022/07/Article-Sweta-Chakroborti.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy