কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি ও গদ্যকার পিয়াস মজিদ।
১৷ আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
পিয়াস মজিদ: আমার প্রথম লেখা ‘জীবনানন্দ দাশকে কিছু প্রশ্ন’ শিরোনামে একটি কবিতা। মজার ব্যাপার জীবনানন্দেরই বইয়ের নামে নামাঙ্কিত কুমিল্লার স্থানীয় ‘রূপসী বাংলা’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল, কলেজ প্রথম বর্ষে থাকাকালে।
২৷ কবিতা আপনার কাছে কী?
পিয়াস মজিদ: কবিতা আমার কাছে নিজের আনসেন্সরড প্রকাশ। আমি মনে করি যতো সাজসজ্জাই থাকুক কবিতায় একজন কবি নিজেকে আদিম-উদোমভাবে প্রকাশ করেন আসলে। শনাক্ত করার দায়িত্ব পাঠকের।
৩৷ কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
পিয়াস মজিদ: কবিতা মানুষকে দশাগ্রস্থ করতে পারে, দিশা দিতে পারে আবার বেদিশাও করতে পারে।
৪৷ আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি৷ ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কী করেন?
পিয়াস মজিদ: কিছু কবিতা অটোমেটিক রাইটিংয়ের মতো আসে, রাস্তায় ঘুরতেফিরতে। লোকাল বাসে চড়তে গিয়েও। আবার কিছু কবিতা সচেতন নির্মাণ আমার। কেউ স্বীকার করে না কিন্তু আমি মনে করি, একেবারে স্বভাবকবির সৃজনপ্রক্রিয়াতেও সচেতন প্রয়াস থাকে, ক্রমনির্মাণ থাকে।
৫৷ আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
পিয়াস মজিদ: আমার লেখার প্রেরণা আশ্চর্যসুন্দর এই বেঁচে থাকা, আশ্চর্যকুৎসিত এই বেঁচে থাকা। প্রেমবোধ এবং যৌনবোধ। মৃত্যুর দিকে মানুষের অন্তহীন লংমার্চ।
৬৷ আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন৷ সে সময়ের বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক— এসব কীভাবে সামলেছিলেন?
পিয়াস মজিদ: আমি যখন ‘নাচপ্রতিমার লাশ’ লিখেছি তখন অনেকেই বলেছে—এত কঠিন করে লেখার কী আছে! আবার যখন ‘অফ টপিক’ লিখেছি তখন বলা হলো, কবিতাকে কোন হালকা পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে! আমি কিছুতেই বিচলিত হইনি, ভেবেছি—সবটাই কবির পর্যায়। আমি কখনও একমাত্রিক কবিতা লিখতে চাই নি সাম্য৷ জীবনের বহুভঙ্গিমতা আমার কবিতায় ‘র’ ভাবে এনেছি সবসময়। তাই চে গুয়ে ভারার চুরুট থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান—আমার কবিতায় চলে আসে নিরায়াসে।
পরিপার্শ্ব একজন কবিকে সাহস যেমন দেয় তেমনি পর্যুদস্তও করে। আমি নিজেকে একলা চলার অভীক ভেবে সামনে এগিয়েছি কিংবা হয়তো পিছিয়েছি।
৭৷ সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়, কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস-মৌলবাদ ঠেকাতে চায়, আরো নানাকিছু করতে চায়৷ আপনি কী করতে চান?
পিয়াস মজিদ: সাহিত্যকে, শিল্পকে কোনও বস্তুগত ব্যবহারযোগ্যতায় নিয়ে যেতে চাওয়া কেন? সাহিত্য, শিল্পের ঘাড়ে কোনও গুরুভার চাপিয়ে দিতে চাই না৷ বরং আমি তো মনে করি, লেখার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজে পেলে বা সেটাতে আনন্দ পেলে আমি লেখা ছেড়ে দেব। লিখতে না পারলেও জোর করে জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লিখে যাওয়ার বাসনাকে বর্বর মনে হয় আমার কাছে।
৮৷ যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিলো?
পিয়াস মজিদ: একজীবনে মানুষ মূলত মুহূর্তজীবী৷ মুহূর্তের কাদা ও কুসুম সদর্থকভাবে গায়ে মাখতে জানলে বেঁচে থাকা জাস্ট মৃত্যুর বিপরীতার্থক কিছু বলে প্রতিভাত হবে না।
৯৷ করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
পিয়াস মজিদ: বিরাট প্রভাব ফেলেছে৷ করোনা আমাকে নিঃসঙ্গতার বিশাল বিনাশী সৌন্দর্য আরও গভীর করে আস্বাদন করতে শিখিয়েছে।
১০৷ আপনার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
পিয়াস মজিদ: বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তকে উদযাপন করুন৷ কখনও সময় পেলে আমার একটা কবিতা পড়ুন, ভালো লাগলে আরও একটা৷
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
পিয়াস মজিদের জন্ম ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৪, চট্টগ্রামে৷ ভিটেমাটি ও বেড়ে ওঠা: কুমিল্লা৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এখন কাজ করেন ঢাকার বাংলা একাডেমিতে।
একসময় কবিতার পাশাপাশি গল্প ও প্রবন্ধও লিখতেন৷ এখন কেবল কবিতাতেই থিতু। কবিতাই তার পটভূমি, বর্তমান আর অনিশ্চিত আগামী।
উল্লেখযোগ্য কবিতার বই: নাচপ্রতিমার লাশ, মারবেল ফলের মওসুম, কুয়াশা ক্যাফে, নিঝুম মল্লার, গোলাপের নহবত, ক্ষুধা ও রেস্তোরার প্রতিবেশী, প্রেমপিয়ানো, মুহুর্মুহু মিউ মিউ, মির্জা গালিব স্ট্রিট, অফ টপিক, এইসব মকারি, এ সকাল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ভুলে যাওয়া স্কার্টের সিঁড়ি, রূপকথার রাস্তাঘাট ইত্যাদি।





মন্তব্য