.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

শিল্প ও রাজনীতি: একটা ঘরোয়া আলাপ | রাজীব দত্ত


অমুকবাদ- তমুকবাদ বলে তো সারা জীবন কাটালেন, লাভ কী হলো?
ওইসব ভাব-টাব ছেড়ে মাঠে নেমে দেখেন।
কী সব আঁকেন-লিখেন কিচ্ছু বুঝি না।
সুকান্ত বেঁচে থাকলে রাজনীতিতো ছাড়তেনই, সঙ্গে রাজনৈতিক কবিতা। 

এইই হলো আমাদের রাজনীতিক (বামপন্থী) আর শিল্পীদের পারস্পরিক ধারণা। এতে সত্যতা অনেক, সাথে মেলা খানা-খন্দও। তারা একে অপরের দিকে আঙুল তুলে এগোতে এগোতে এসব দৃশ্য-অদৃশ্য গর্তের তলানিতে চলে যান। যা উনাদের চেয়ে আমাদের জন্যই বেশি ক্ষতিকর। তার কারণ, আমরা এখনো মনে করি এই শিল্পী- রাজনীতিক উভয়কেই জগতের প্রয়োজন। আর এই প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা তাদের উপরিউক্ত বাক-বিতণ্ডায় নাক গলাবো। কষ্ট করে খতিয়ে দেখবো রাস্তার কোন জায়গায় খানা আর কোন জায়গায় খন্দ। তবেই সামনে যাওয়াটা সহজ হবে।

ক.

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বামপন্থী দলগুলোই এখনো জনগণের অনেকটা পক্ষে। এটা সত্য তারা খুবই ছোট।তাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক মতভেদ আছে। তাদের উচিত দেশের স্বাথেই নিজেদের ইগোসমস্যাগুলো দূরে রেখে, ন্যূনতম ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্তু আমরা বারবার দেখি তারা কিছু দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয় বটে, কিন্তু আন্দোলনে তাদের নিজেদের দলীয় স্বার্থের জন্য বা অন্য কোনো কারণ(সরকারী? এটা থাকবেই)আন্দোলন ভেস্তে যায়। তখন এরা একজন আরেকজনকে সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলে গালাগালি করে। মাঝখান থেকে জনগণ বিভ্রান্ত হয় আর ফল চলে যায় সুবিধাভোগীদের হাতে। এর কারণ কী? প্রথমত হতে পারে, দলগুলো সৎ, কিন্তু পথ চিনছে না। দ্বিতীয়ত, হতে পারে দলগুলোর নেতারা সব ভূয়া। কিন্তু কর্মীরা নয়। কেননা এসব ভুল/শুদ্ধ দলগুলোতে এখনো প্রচুর সৎ কর্মী আছে।এটা তাদের শত্রুরাও মানবেন। কিন্তু তারা হয় চূড়া পর্যন্ত যেতে পারে না আর নয়তো তারা নেতাদের দ্বারা বিভ্রান্ত। এর জন্য আমরাও দায়ী। কারণ, আমরা তাদের সমালোচনাই করে গেছি। অথবা দূর থেকে তাদের কার্যকলাপ দেখে গেছি। পাশে দাঁড়াইনি। (হতে পারে, তারা আমাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তারা চেয়েছে আগে আমি তাদের লিস্টিতে গিয়ে নাম লেখাই, পরে  অন্য সব। কিন্তু তারপরও তাদের দাবির সাথে যেহেতু আমার ভবিষ্যৎ জড়িত, সব দায়িত্ব শুধু তাদের হাতে ছেড়ে দিবো, এইরকম বোকা আমি হবো কেনো?) এছাড়া, এটাও তো ঠিক, যে আমি নিজেকে সৎ মনে করি, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ মনে করি, সেই আমি যদি সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতাম তবে একজন অসৎ নেতা বা বিভ্রান্ত  কর্মীর সংখ্যা হয়তো কম হতো।এসবের পরেও এটা আমরা  অবশ্যই স্বীকার করবো , এই দলগুলো সক্রিয় আছে বলেই, এখনো ফুলবাড়ী-কানসাটের মতো ঘটনার জন্ম হয়। হ্যাঁ জনগণ অনেকসময় নিজেই নিজের আন্দোলন গড়ে তোলে বটে, কিন্তু আমাদের দেশে জনগণের এরকম  স্বত:স্ফুর্ত(এ শব্দটার প্রতি যাবতীয় সন্দেহের পরও)   আন্দোলন খুব কম, যেখানে কোনো না কোনো বামপন্থী কর্মী বা সংগঠন কোনোরকম যুক্ত নাই। তাই আমি-আপনি যখন এসব দল-কর্মীদের দিকে আঙুল তুলি, তখন নিজের গায়েও কিছু কাদা এসে পড়ে।

খ.

ক্ষমতাকাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব নয়, এটা সত্য আর এর জন্য রাজনৈতিক দলের বিকল্প নাই এটা আরো বেশি করে সত্য। কিন্তু তার জন্য সবাইকে সক্রিয় রাজনীতিই করতে হবে এটা ভাবা কোনো যুক্তিতেই উচিত নয়। এ অনেকটা এরকম, যে শ্রমিক পেরেক বানায়, সেই শ্রমিক হয়তো রাজমিস্ত্রিকে চিনেই না। কিন্তু রাজমিস্ত্রির ঘরে সেই পেরেক ছাদ বানাতে যেমন লাগে, তেমনি লাগে তৈরি ঘরের চেয়ার-টেবিলেও। একইরকম, যে রাজনীতিক আন্দোলন-সংগ্রাম- জেল খাটতে খাটতে সমস্ত জীবন খুইয়েছেন, তার তুলনায় যে লোকটা ফিল্ম সোসাইটি বা লিটলম্যাগ করতে করতে ফতুর হয়ে গেছে, তার অবদান কোনো অংশেই কম নয়। এখানে রাজনীতিক হয়তো সরাসরি মিস্ত্রি। তার ঘর বানানো আমাদের চোখের সামনে হয় বটে, তার সাথে সাথে অই সিনেমাপাগল লোকটা পেরেক কারখানার ঠিক শ্রমিকের কাজটাই করে যান। আমাদের আড়ালে।

গ.

কিন্তু তাই বলে কি, সিনেমাপাগল লোকটি চ্যাপলিন- ঋত্বিক ছাড়া দুনিয়ার আর কোনো খবরই রাখবেন না? অবশ্যই রাখবেন। যদি ভেতরে কোনো ফাঁকি না থাকে, ভাণ না থাকে, তবে চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস’ বা ‘সিটি লাইট’ অথবা ঋত্বিকের ‘অযান্ত্রিক’ থেকে শুরু করে ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ সবই তার কাছে একেকটা প্রশ্নবোধক চিহ্ণ হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে। ‘গোল্ড রাশ’র চ্যাপলিন যখন প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর হয়ে জুতো খেতে বসবেন অথবা ‘মডার্ন টাইমস’এ এসে শ্রমিক চ্যাপলিন যখন যন্ত্রের সাথে দৌঁড়ে কুল পাবেন না, বারবার হেরে যাবেন তখন ফিল্ম সোসাইটির ভদ্রলোক ভাবতে বাধ্য হবেন, পৃথিবীতে সাম্যবাদ নিছক কল্পনা হলেও পুঁজিবাদ ক্ষুধার চেয়ে কোনোদিক থেকে কম বাস্তব নয়। আর তাই অই রাজনীতিব্যস্ত লোকটির চেয়ে কোন দিক থেকেই রাজনীতিকে কম বুঝবেন না একজন সিনেমা পরিচালক বা লিটলম্যাগ সম্পাদক।তিনি তারকোভস্কির ডায়েরির ঠিক পাশেই রাখবেন মাও সে তুংয়ের লংমার্চ।তার ‘ফিরে এসো চাকা’র পাশেই থাকবে ‘জীবন সংগ্রাম’। সমান গুরুত্বে। কেননা দুটোই  দুরকম মানুষের একই অভিজ্ঞতারই ফসল।

ঘ.

যিনি অক্টোবর বিপ্লবে যুক্ত ছিলেন, অক্টোবর বিপ্লব নিয়ে সিনেমা বানিয়ে ছিলেন, সেই আইজেনস্টাইনের ছবিতে যেদিন কাঁচি চলে, কিংবা আর যদি সিনেমা বানাতে না পারেন, এই আশংকায় তারকোভস্কি যেদিন খুব মুষড়ে পড়েছিলেন অথবা চ্যাপলিনের ‘গ্রেট ডিক্টেটর’ যেদিন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতে নিষিদ্ধ হয়ে যায় সেই দিন থেকেই হয়তো গর্তটির শুরু, তারপর অনেক সময় পার হয়ে গেছে।একজন সুকান্তকে যক্ষা শেষ ছোবলটি না মারার আগে পার্টি কমরেডরা একটুও বুঝলো না, একটা মানুষ একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। কিংবা একজন ঋত্বিক যেদিন পার্টি, পার্টির নাটকের দল থেকে বেরিয়ে আসলেন, সেই দিন কী গভীর যন্ত্রনায় কতোটা মদের মধ্যে কতোক্ষণ ডুবে ছিলেন, কোনো পার্টি কমরেডই তা বুঝেন নি। বোঝার চেষ্টাও করেননি। অথবা আমাদের কমিউনিস্টদের মধ্যে একজন রণেশ দাশ গুপ্ত ছাড়া যখন কেউই জীবনানন্দকে বুঝেন না, তখনও না। আরো পরে নকশালরা যখন রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙ্গেন, তখন আমরা বুঝি গর্তটা অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। আর আমরা তার তলানিতে। তলানির গাঢ় অন্ধকারে।

উপসংহারের পরিবর্তে

লাঠি আর বাঁশি এক নয়। লাঠিকে বাঁশি দাবি করলে শিশুও হাসবে। আর বাঁশিকে দিয়ে লাঠির কাজ করলে, বাঁশিটা ভাঙ্গা বৈ আর কিছুই হবে না। এই বোধটুকু যদি না থাকে লিফলেট আর সাহিত্য গুলিয়ে যাবে। তখন শিল্পের গায়ে ‘মার্কসবাদী’, ‘বিপ্লবী’, ‘গণমানুষের’ ইত্যাদি তকমা লাগানো ছাড়া উপায় থাকবে না। আর তা না হবে বাঁশি, না হবে লাঠি। এতোদিন ধরে এইই হয়েছে। এখন মুক্তি যদি আদৌ আমাদের লক্ষ্য হয়, এসব সমস্যাকে সম্পূর্ন নতুনভাবে, মোহমুক্ত চোখে দেখতে হবে। তবেই কিছু একটা হয়তো সম্ভব, নয়তো নয়।

মন্তব্য

BLOGGER: 1
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: শিল্প ও রাজনীতি: একটা ঘরোয়া আলাপ | রাজীব দত্ত
শিল্প ও রাজনীতি: একটা ঘরোয়া আলাপ | রাজীব দত্ত
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhxgOJaAgFrtBPZOOFRaNsTXuTiSiib_kA-NA7q16P4lElhMEGK1G_Xht0TnP_G1kOuGeDgC8l-_4epIbP0nX5D7ITlAQMXe4JZyHxnSgHs49oW2d6YdAa-QpHzNiGnAvYzAGrVoahf89I/s320/%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC+%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhxgOJaAgFrtBPZOOFRaNsTXuTiSiib_kA-NA7q16P4lElhMEGK1G_Xht0TnP_G1kOuGeDgC8l-_4epIbP0nX5D7ITlAQMXe4JZyHxnSgHs49oW2d6YdAa-QpHzNiGnAvYzAGrVoahf89I/s72-c/%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC+%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4.jpg
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2019/03/blog-post_21.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2019/03/blog-post_21.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy