.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১১)

জিললুর রহমানের আত্মজীবনী। কোরাকাগজের খেরোখাতা
কোরাকাগজের খেরোখাতা
জিললুর রহমান
 
পঞ্চম বর্ষ যখন শেষ হলো, নতুন ইশকুলে ভর্তির এক নতুন যন্ত্রণা শুরু হলো। আর তখন চতুর্থ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার সেই ঘটনা বারবার মনে পড়ে নিজে নিজে শরমিন্দা হয়ে থাকতাম। আব্বা যখন মনে করিয়ে দিতেন, তখন কো মনে হতো মাটির সাথে মিশে যাই। যাই হোক, এবার ভর্তি পরীক্ষা দিলাম জুনিয়র হাই স্কুল, মুসলিম হাই স্কুল ও কলেজিয়েট স্কুলে। সেই যে প্রবাদ পড়েছিলাম ‘ন্যাড়া দুবার বেলতলায় যায় না——তা নিজের ক্ষেত্রেও সঠিক হলো। আমি টিকে গেলাম সব স্কুলেই। তবে মুসলিম হাই স্কুলে ছাত্ররা টুপি পরে স্কুলে যায় দেখে কেমন মাদ্রাসা মাদ্রাসা লাগতো। তাই মুসলিম হাই স্কুলে পড়ার কোনো আগ্রহ আমার জাগেনি। আমাদের সময়ে কলেজিয়েট স্কুলের বেশ নামডাক ছিল। তাই একটু আবদার করলাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার। আব্বার চাকরি যেহেতু সিটি কলেজে, তাই কাছাকাছি হিসেবে একসাথে আসা যাওয়া সম্ভব। কিন্তু কে শোনে অধমের কথা। আব্বা সরাসরি জানিয়ে দিলেন ‘ঘরের কাছে স্কুল ফেলে এতদূরে পড়ার কোনো যুক্তি নেই’। অগত্যা ভর্তি হলাম তুলনামূলকভাবে অখ্যাত চট্টগ্রাম জুনিয়র হাই স্কুলে। তবে সবাই এটাকে এম. ই. স্কুল নামেই ডাকতো। পরে শুনেছিলাম এটা একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল যার নাম ছিল মুসলিম এডুকেশন স্কুল যা সংক্ষেপে এম ই স্কুল। স্কুল বলতে যে স্বপ্ন দেখতাম, একটি পরিপাটি ভবনের সামনে বিস্তীর্ণ মাঠ——এই স্কুল মোটেও তেমনটা নয়। এটা ছিল একটি পাহাড়ের উপরে ছোট ছোট টিনের ছাউনি ঘর। আর একটি ছোট মাঠ তাও পাহাড়ের উপর সামান্য সমতল এলাকা—মালভূমির সদৃশ। চট্টগ্রাম কলেজের পশ্চিম পাড়ে বয়ে যাওয়া সড়কটির নাম ড. এনামুল হক সড়ক। কিন্তু শিক্ষাবিদ গবেষক এই ব্যক্তি সম্পর্কে যেমন এতদঞ্চলের শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল জনগণ অজ্ঞ, এই সড়কের নামটিও তেমন কেউ জানেন বলে মনে হয়নি। বরং সড়কটি কলেজ রোড নামে খ্যাতি লাভ করে। এই কলেজ রোডের পূর্ব পার্শ্বে যেমন চট্টগ্রাম কলেজ তেমনি পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ ও আমাদের ইশকুল চট্টগ্রাম জুনিয়র হাই স্কুল। আমার সহপাঠী হিসেবে পাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী এবং পাশের বাসার বাল্যবন্ধু এস এম কামালকে। কামালের সাথে সকাল সাড়ে ন’টায় বাসা থেকে রওনা দিয়ে নবাব সিরাজুদ্দৌল্লা রোড পার হয়ে গুড সাহেব রোড ধরে পশ্চিমে ফজলুল কাদেরের পাহাড় পর্যন্ত পৌঁছে উত্তর দিকে পা চালিয়ে গনি বেকারীর মোড়। তার পরে কাজেম আলী ইশকুলের সামনে এসে রাস্তা পার হতাম মিসকিন শাহ মাজারের গেইট বরাবর। তারপর আবার উত্তর দিকে এগুলে বামে কবরস্থানের পরে বিশাল মাঠ ও মহসিন কলেজের রাস্তা পার হলেই হাতের বামে পাহাড়ের বুকে আমাদের ইশকুল। প্রথম যেদিন স্কুলে যাই সেদিন আব্বা ছিলেন সাথে। হেডস্যারের রুম থেকে পিয়ন নিয়ে যায় পাহাড়ের ওই পাশে উত্তর দিকে একটি বিশাল লম্বা বেড়ার ঘরের দিকে। ঘরটির উত্তর পাশে বেশ নীচে কুলুকুলু বয়ে চলেছ চওড়া এক নালা। তার পাশ দিয়ে পিচঢালা গলি ঢুকে গেছে পশ্চিমে উঁচু পাহাড়ের দিকে——যার নাম দেবপাহাড়। ঠিক কোন্ দেবতার পাহাড় তা জেনে ওঠা সম্ভব হয়নি। হয়ত আব্দুল হক চৌধুরীর বইতে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু আমার চোখে পড়েনি। মোটকথা আমি এমন একটি ইশকুলে পড়া শুরু করলাম যার কোনো সীমানা দেয়াল নেই। ক্লাশে ঢুকিয়ে দিয়ে চলে গেলেন পিয়ন। পিয়নকে এখানে দাদু ডাকতে হত। এরকম ঘন্টাদাদু টিফিনদাদু ইত্যাদি নানারকম দাদুর সমাবেশ ছিল।  ক্লাসে ঢোকার পরে সীট পেলাম বেশ পেছনের দিকে। দুই জনে মিলে এক টুলে বসতে হয়। আমাকে পেয়ে সাদরে গ্রহণ করলো মোশাররফ। সে আমার সাথে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত আবুল কাসেম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছে। আমার ভর্তি ব্যর্থতার বছর সে এই স্কুলে চলে আসে। কামালও। মোশাররফের পাশে বসে ক্লাসরুম দেখতে লাগলাম।  দরজার উল্টাপাশে জানালার নিচের পাটা থেকেই পাহাড় উপরের দিকে উঠে গেছে। জানালা টপকে গেলেই একটি ছোট পাহাড়ী খোলা প্রায় সমতল এলাকা রয়েছে। রোদ পোহানো এবং মার্বেল খেলার জন্যে বেশ সুন্দর জায়গাটা। খুব লোভ হচ্ছিল ছুটে যাই, জানলা গলে উঠে যাই পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে মেঘমল্লারের দেশে।

ক্লাস টিচারের নাম সম্ভবত সিরাজ স্যার। অবশ্য অল্প ক’দিন পরে তমিজ স্যার দায়িত্বে এসেছিলেন। প্রথম দিন ইশকুলে শাস্তি পাওয়া যেন আমার নিয়তি। তাই পরের ক্লাসে যখন কোব্বাত স্যার এলেন, ক্যাপ্টেনকে ডাক দিয়ে বললেন “নিয়ে আয়”। শুনেই লক্ষেশ্বর সেন জানালা পথে পাহাড়ে উধাও হয়ে গল। যখন ফিরলো, হাতে ইয়া লম্বা একটি শিকড় উপড়ানো বৃক্ষ কী এক লম্বা ডাল——পাতা ছাড়াতে ছাড়াতে ক্যাপ্টেনের প্রবেশ। তারপর তো যথারীতি পড়া ধরা ও রামধোলাই চলমান। আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি। একের পর এক ছাত্রের পিঠে ছাপ রাখতে রাখতে কিছুটা থ্যাতলা বিধ্বস্ত অবস্থা যখন বেত্র মশায়ের, ঠিক তখনই স্যারের নজর পড়লো আমার উপর। স্যার কিছু পড়া ধরার আগেই বলে দিলাম ঝপ করে ——“আমি আজ নতুন এসেছি”। শুনে গম্ভীর স্বরে ডাকলেন ——“আয়, এদিকে আয়”। স্যার আমার নাকের ডগা তার মুঠোয় চেপে ধরলেন। তারপর কেমন করে যেন আঙুলগুলো নাড়ত থাকলেন। সব ছাত্র হাসতে শুরু করেছে। ভ্যাবাচ্যাকা ভাব কাটতে লক্ষ্য করলাম, আমার ব্যথা লাগছে না। আমিও অগত্যা হাসলাম অন্যদের সাথে সাথে। পরে ছাড়া পেয়ে নিজ সিটে ফিরে পাশের সহপাঠীকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার অমন করলো কেন! তখন সে জানালো আমার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। এতদিন শুনেছি কান টেনে লাল করে দেবার কথা, আজ শিখলাম নাকের ডগা লাল করার পদ্ধতি। তারপরের ক্লাসে এলেন কুঞ্জবিহারী নাথ স্যার——সংক্ষেপন কুঞ্জ স্যার। দেখতে ভালুকের মতো। কয়লার মতো কৃষ্ণ অথচ প্রশস্ত চেহারা, গায়ে কালো সোয়েটার, কালো প্যান্ট ও কালো জুতো পায়ে ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই পিনপতন নীরবতা নেমে এলো। পিনপতন নীরবতা কাকে বলে তখন বুঝতাম না। পরে বুঝেছিলাম পিনের মতো হাল্কা জিনিষের পতনের শব্দ পর্যন্ত শোনা যাবে এমন নিস্তব্ধতার অপর নাম পিনপতন নীরবতা। কুন্জবাবু ঢুকতেই এই পিনপতন নীরবতার দেখা পেলাম — যেন শ্রেণীকক্ষে বাঘ ঢুকেছে। কুন্জবাবুর পড়া ছিল ট্রান্সল্শন। কিন্তু কাউকে জবাব দিতে দেখলাম না। সবাই ধীরে ধীরে বেন্চের ওপর উঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আমিও কথা না বাড়িয়ে সহপাঠীদের সঙ্গী হলাম। একজন জবাব দেবার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু কোথাও গোল পাকিয়ে ফেলে। তাকে স্যারের কাছে ডেকে টেবিলের তলায় মাথা ঢুকিয়ে দাঁড় করানো হলো। একজনের পিঠে প্রথমে কনুই দিয়ে মেরে তারপর বসানো হলো বিশাল মুষ্টিবদ্ধ ঘুষি। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম। এমন থরহরি কম্পমান ক্লাস আমাকে বিপর্যস্ত করেছিলো খুব। পরদিন থেকে সব পড়া ফেলে কেবল কুঞ্জ স্যারের পড়াই পড়তে থাকতাম দিনরাত। কিন্তু তেমন লাভ হতো না, স্যারের ভয়ঙ্কর মূর্তি এবং দশাসই মুঠোর দিকে তাকিয়ে আমি সারা রাতের পড়া ভুলে যেতাম। অন্যসব বিষয়ে দুর্বল হয়ে গেলাম ধীরে ধীরে। তাই ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে ক্লাসের প্রথম হওয়া ছাত্র ধীরে ব্যাকবেঞ্চার হয়ে পড়লাম। ষান্মাসিক পরীক্ষার ফলাফলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল। ক্লাস সিক্সে একজন ড্রয়িং স্যার ছিলেন। নাম আরিফ স্যার। তালপাতার সেপাই বাগধারাটির সাথে এর মাঝে পরিচয় হয়েছিল, আর স্যারকে দেখে যেন তার সাক্ষাত উদাহরণ দেখতে পেলাম। আরিফ স্যার আমাদের আঁকতে না শিখিয়ে আঁকার থিওরি পড়াতেন। যেমন লাল ও হলুদের মিশ্রণে সবুজ হয় ইত্যাদি। পরের দিন পড়া না পারলে দু’আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল রেখে চাপ দিতেন এমন জোরে যে আমি আমার বাপের নাম ভুলে যেতাম। আজ ভাবি, একটু হলুদ রংয়ের সাথে লাল রং মিশিয়ে প্র্যাকটিক্যালি দেখালে তো এমনিতেই মনে থেকে যেত। এই বিচিত্র শিক্ষা পদ্ধতিকে কি করে ভাল বলব বুঝি না, অথচ সমবয়সীদের প্রায় বলতে শুনি যে আগের মতো পড়ালেখা আজকাল নেই। আমিও বলি, হ্যাঁ, নেই——কারণ, এখন আমার বাচ্চাদের এটা মুখস্ত করতে হয় না। পেন্সিল আঙুলের ফাঁকে দিয়ে চাপ দিলে কেমন যন্ত্রণা হয় তা নিজে নিজে একবার টেস্ট করে নিতে পারেন।
 
ক্লাস সিক্সে আমার পড়ালেখার চুড়ান্ত অবনতি ঘটে। আমিও স্কুলের পড়া অপেক্ষা অন্য বইয়ের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকলাম। মোহাম্মদ নাসির আলীর লেখা ভিনদেশী এক বীরবল বইটি তখন যেমন এখনও তেমনি সমান প্রিয়। নাসিরউদ্দিন হোজ্জার মজার মজার গল্প আমি এখনও মাঝে মাঝে উল্টে পাল্টে পড়তে পছন্দ করি। মোহাম্মদ নাসির আলীর লেখা ভাল লেগে যাওয়ায় ওনার আরও বই খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকি। বইয়ের দাম ৫/৬ টাকা হলেও সে টাকা সংগ্রহ করা ছিল দুরূহ। এর মধ্যে একবার আব্বা অসুস্থ হলে চকবাজার থেকে কাঁচাবাজার করতে যেতে হয়। তখন চন্দনপুরা মসজিদ থেকে চকবাজার যেতে রিকশা ১ টাকা কী ২ টাকা নিত। আমি বাজারে হেঁটেহেঁটে যেতাম আর বাজার নিয়ে রিকশায় ফিরতাম। যাবার ভাড়া বাবদ যে টাকা দিত তা আলাদা করে নিজের কাছে রাখতাম। এইভাবে ৪/৫বার বাজারে গেলে ১টা বই কেনার টাকা জমতো। তবে বাজারের হিসাব থেকে টাকা সরানোর বুদ্ধি কোনোদিন হয়নি। আমি আজও মনে করি, ভুল করে যদি সে বুদ্ধি মাথায় আসতো, তবুও ঠিক ধরা পড়ে যেতাম। যাই অসৎ হবার শিক্ষা ঘরে বাইরে মেলেনি বলেই হয়তো এমনটা সম্ভব হয়েছে। বই কেনার জন্যে আন্দরকিল্লায় পাঠক বন্ধু লাইব্রেরি, মডার্ন লাইব্রেরি, তাজ লাইব্রেরি, নওরোজ কিতাবিস্তান ইত্যাদিতে ঘুরতাম। বছরে ১ কি ২ বার আম্মার সাথে নিউমার্কেটে গেলে কোনো এক ফাঁকে ঢুকে যেতাম দোতলায় অবস্থিত বইঘর নামের বইঘরে। কালেভদ্রে উজালা বুক স্টোরেও ঢুঁ মেরেছি। দূর থেকে রাস্তার অপরপারে কারেন্ট বুক সেন্টার দেখতাম। কিন্তু আব্বা বা আম্মাকে সাহস করে বলতে পারতাম না ওদিকে নিয়ে যেতে। বইঘর অনেক বনেদী প্রকাশনীর বটে। শামসুর রাহমানের কবিতার বই বন্দী শিবির থেকে এবং বিধ্বস্ত নীলিমা প্রকাশ করেছিল বইঘর। শহীদ কাদরীর কবিতার বই উত্তরাধিকার-ও বইঘর থেকেই প্রকাশিত। কিন্তু আফসোসের বিষয় আজ আর বইঘরের প্রকাশনা তো নেই-ই, বইঘরও অস্তিত্বহীন। উজালা বুক স্টোরে বইয়ের পাশাপাশি স্ট্যাম্প বা ডাকটিকেট পাওয়া যেত। একসময় ডাকটিকেট সংগ্রহেরও সখ জেগেছিল। কিন্তু বেশিদিন সে সখ স্থায়ী হয়নি। বই সংগ্রহের ঝোঁক বেড়েছে সময়ের সাথে সাথে। আরও একটি কাজ নিয়মিত করতাম —— তা হচ্ছে সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা পড়া। আমার আম্মা ‘বেগম’ পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন। বেগম’এর ঈদ সংখ্যায় অনেক সুন্দর গল্প ও কবিতা ছাপা হতো। এসব গল্প কবিতা আমাকে খুব টানতো। অবশ্য একসময় টের পাই কবিতাগুলোর মধ্যে একটা মেয়েলিপনা রয়ে যায়। আমি জুবাইদা গুলশান আরা, রাবেয়া খাতুন, নিলীমা ইব্রাহিম এবং রিজিয়া রহমানের লেখা গল্প পড়তে পছন্দ করতাম। তবে সব যে বুঝতাম তা বলতে পারব না। আমার বই পড়ার ঝোঁক এমন বেড়ে গিয়েছিল যে, পাঠ্য বইয়ের নীচে অপাঠ্য এসব বই খুলে পড়তাম। কিন্তু আব্বার নির্দেশ ছিল পড়া পড়তে হবে জোরে জোরে, যাতে আমাদের পড়াটা তিনি তাঁর রুম থেকে শুনতে পান। তাই আমার আজীবনের অভ্যাস এখনও শব্দ করে বই পড়ি। সে সময়ে আমি আর লীনা দক্ষিণের ঘরে বড় বড় করে পড়তাম। আর আব্বা সেই শব্দ শুনে শুনে সোফায় বসে দুপুরের পড়া দৈনিক সংবাদ পুনর্পাঠ করতেন। এদিকে মাঝে মাঝে ভাইবোন দুজনেই ঝিমাতে শুরু করলে একসময় আমাদের কন্ঠ স্তিমিত হতে হতে চুপ হয়ে যেত। যখন টের পেতাম, তখন আমাদের দুজনের চুল আব্বার দুই মুঠিতে ধরা, আর আমাদের মাথায় মাথায় ঠোক্কর খাইয়ে তিনি শাস্তি দিচ্ছেন। এর মধ্যে আমার আবার গল্পের বই পড়ার সখ এত বেড়েছে যে, পাঠ্যবইয়ের নীচে গল্পের বই রেখে ওটা পড়তে শুরু করেছি। প্রথম দিকে চুপি চুপি পড়লে আব্বা চিৎকার করে বকা দেন দেখে একটু বড় করে পড়তে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু লীনা আবার আব্বারে বলে দেবে এই ভয়ে তা’ও পারিনি। তাই চুপি চুপি কিছুক্ষণ গল্পের বই পড়তাম, আব্বার টনক নড়লে চিৎকার শোনা মাত্র বড় বড় করে পাঠ্যবই পড়তাম। কিন্তু চোরের সাতদিন তো গ্রস্তদের একদিন। এক সন্ধ্যায় আব্বা পেছন থেকে এলে আমার গল্পের বই পড়তে দেখে নারকেল শলাকার ঝাড়ু দিয়ে বেশ ঝেড়েছিলেন। তবে, মাগরেবের পরে পড়তে বসা এবং রাত ন’টার মধ্যে পড়া শেষ করার কঠোর শৃঙ্খলার শেষে অপাঠ্য বই পড়াতে আব্বার কোনো নিষেধ ছিল না। ‘টম সয়ারের গোয়েন্দাগিরি’ নামে মার্ক টোয়েনের একটি বই আমার এর মধ্যে পড়া হয়, যা আমাকে গোয়েন্দা কাহিনীর প্রতি আকৃষ্ট করে। রহস্যময়তার উত্তেজনা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়। তবে বইটির অনুবাদকের নাম এখন আর মনে পড়ছে না।

(১৩ জানুয়ারি ২০২১, রাত ১১:২৫; চট্টগ্রাম)

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১১)
জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১১)
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgu6QOtuFx3-mmQizLh37oKfbgURloYGrxS1b4ktngdyqE15Un90Zo0YnRI-nLuKkQmStuThOlPPqB2mvupRQoF4i2NiZY6Hg4aFLWhrKObjK24UUqN5gur05H7IOgRVM9pWsCKCSxkTxI/w320-h160/%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2580.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgu6QOtuFx3-mmQizLh37oKfbgURloYGrxS1b4ktngdyqE15Un90Zo0YnRI-nLuKkQmStuThOlPPqB2mvupRQoF4i2NiZY6Hg4aFLWhrKObjK24UUqN5gur05H7IOgRVM9pWsCKCSxkTxI/s72-w320-c-h160/%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2580.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2021/01/blog-post_28.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2021/01/blog-post_28.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy