.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

নক্ষত্র জন্মের গান : সৌরভ দত্ত'র পাঁচটি কবিতা

গান্ধারীর চোখ


কৃষ্ণকলি গাছ আলো দেবে বলেছিল,টুনটুনি পাখির আলো। হাড়-পাঁজর ফাটিয়ে নেমে আসছে অমারাত।মুখোশের ভিতর দুর্বার গন্ধিপোকার চলাচল;অর্থহীন ঢুকে যাচ্ছে মোমঘরে... ধনেশ পাখির মতো পিঠ উঁচু করে থাকা হত্যাকারী ঢিপি। জলচ্ছ্বাসের শব্দ হচ্ছে কোথাও; তাঁত বুনছে পাল পাড়ার দশরথ রক্তসংকেতের কোণে জট পাকিয়ে আছে ঘিলু।এইমাত্র আকাশের জ্যামিতি বক্স থেকে ভেঙে পড়ল একটা বৃত্ত।কোঁচ নিয়ে মহাশিকারীদের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্য জোনাকি। এসো, বৈদিক পাঠ শুরু করো--মারাংবুরুর পুজো হচ্ছে সিংভূমে। দশচক্রে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পূতি হাওয়া, বাবার নস্যির কৌটো...পরিখার দরজা বন্ধ হয়।বিছানার নীচে গিলেটিনে মাথা বাড়িয়ে আছে একফালি কুমড়ো। নগ্ন নির্জনে খসে পড়ছে অনুতাপ।বোনের চুলের ফিতে সিনেমার রিলের মতো খুলে যায় বৃষ্টিদিনে।ঢেউ ওঠে মান্দারে সন্দেশের মেঘে লুকিয়ে থাকে জল।সরে যায় আলোছায়া লালটিপ।অনেকটা ঘুম স্পর্শকের টানে পেরিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত।এমনই দিনে দোজখনামা; বাবরের জন্ম হয়।হাতিয়ারগুলো ভোঁতা ডোবানো নুনজলে নাচের লহরী তুলছে ঝাউগাছ।রিপু তাড়িত সূর্পনখা ঘুরে বেড়াচ্ছে গড়ের বনে।নৌকাগুলো সব পাথর হয়ে গেছে।রাত্রির কঙ্কালের গভীরে হেঁটে যাচ্ছে অরাজক শীৎকার ধ্বনি।আফিমের গন্ধমাখা কবিতার খাতা খুলে বসেছে গ্যাঁটে।রক্ষিতার অন্তর্বাস ঝুলছে পাইনগাছে। অশরীরী শস্যেরা ছড়িয়ে দিচ্ছে কামাগ্নি। পুড়ে যায় গাণ্ডীবের ধনু,পাণ্ডবের শর।টিউলিপ ফুলের উপর কেউ রেখে যায় লাল রক্তের ছিটে।উড়ে আসে গ্ল্যাডিয়েটর, দাসপ্রথা-- শূন্যহাতে ফিরে যায় গান।নারদের মুখের মতো গুহালিপি বাসর সাজায়।মস্তকহীন প্রাসাদের কোলে মাথা রাখে অর্চিষ্মান সুখ।নগর বিজয়ের পর অধিবাস; সূক্ষ্ম পরাজয় লেখা থাকে--গান্ধারীর চোখের মতন।


বেদেমাঠের আলো


তোমার অভিমান, কান্নার ভ্রূণ দাঁতাল হাতির মতো, রুলটানা পৃষ্ঠা সার্কাসের তাঁবুর ভিতর জ্বলে ওঠে ;ফিলোজফিক্যাল আলো প্রত্নবিভাব।পিতামহদের রংচঙে শরীর টানতে টানতে নিয়ে আসে কয়েকটা ক্লাউন সন্ধ্যা। বেদেনীর খোঁপায় বিষপুরিয়া মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে কাঠবেড়ালি সন্তান।টগবগ করে ভাত ফুটছে। আমিষ গন্ধি ইঁদুর ছাল ছাড়িয়ে পড়ে আছে কলাপাতায়।শঠে শাঠ্যাং --এই সব দুঃখ কিনে নিয়েছি আমরা।নারায়ণ শিলার মতো খোসাশুদ্ধ আলুগুলো রাখা আছে নিক্তির অশ্রুঘাসে।পাশে বইছে জংলি পানাখাত। শোলার টোপর পরে বর যাচ্ছে 'বিবাহমঙ্গলে'। বেদেদের ডাক বড়ো অদ্ভুত মায়াবী বাঁশির ডাকঘর। ঈশ্বর যেন বেদে হয়ে ওঠে কান্নার মিথ জড়ো হয় করোটিতে। যে পতঙ্গটা উড়ে যাচ্ছিল জন্মতত্ত্বের গাছ হয়ে, আটকে গেছে ভাঙা মিনারে।ইশারার হাতগুলো জড়ো হতে হতে আস্ত ময়াল সাপ কাঁধ দিয়ে নেমে আসে, পুরাতনী চিনা পুতুল চুরি করে নিয়ে যায় তস্করের দল। পচনশীল রোমশ সভ্যতা কুঁকড়ে যাচ্ছে প্রান্তফলকে। কেউ লন্ঠন ঝালাই করছে পাশের স্কুলে। খামারে রবিধান উঠেছে উৎসমুখে।তারার পিদিম ধোয়া জল চুঁইয়ে পড়ছে খড় থেকে।'মা-আমি বাড়ি যাব'। ভাতের থালা দেখে বিড়ালটা হঠাৎ লাফিয়ে উঠল।মাঠ থেকে আমাকে সরিয়ে নিচ্ছে সাড়ে তিনহাত অদৃশ্য থাবা। চল পূর্বরাগের আয়না ফেলে দিই আকাশে। জলে মেটে সিঁদুর গুলে দেয় অরণ্যজ্যোৎস্নার কাতরতা। কচুপাতায় থিকথিক করছে পিঁপড়ের ডিম।চুম্বক বলয়ে চোখ লাগিয়ে একটা পূর্বজন্ম দেখতে পাই। গোপন চুক্তি সেরে মাছেরা আজ ডাকের সাজ পরে খেয়াল গাইছে। তুমি লাগাম ঘুরিয়ে দাও রাজা-মন্ত্রী-গজ।একটা ভারবাহী বাতাসকে টেনে ছিঁড়ে ফেলল কাঁঠালপাতার মর্মর। ঘুমিয়ে পড়া আঁশবটি গলায় ব্যাঙের মতো আটকে আছে--ঋণগ্রস্ত কবিতায়।পরশপাথর ছুঁইয়ে বুক থেকে অনন্তের সন্ধ্যামণি তুলে নেয় অলকা নারী। টিউলিপ ফুল গুলো ভাঙা হারিকেনের জানালার দিকে নির্বিকল্প তাকিয়ে ।এই বুঝি চিঠি এলো! সমস্ত ইচ্ছে অন্ধ হয়ে আসে।ধারালো খঞ্জর  হাঁটে পারদ গোলার্ধে, আয়ুরেখারা ক্ষয়ে যাওয়া শর্বরীর মতো পাতানো সই বলে ডেকেছে।তুষার-প্রস্তরের উপর বসে সত্যনারায়ণের পাঁচালি পড়ছে রামসদয় পাঠক চূড়ামণি। সন্তাপের পুঁথি তুলে নাও এইবার। আজ শুধু আলেয়া হয়ে উঠব মৃত্যুপোকাদের সাথে।পুকুরঘাটে পেনিসিলিনের যন্ত্রণায় কাতর সাদা ব্যান্ডেজে খুলে যায় অশরীরী সেই
কাচঘর। রায়বাড়ির অষ্টকোণাকৃতি রাসমঞ্চের  সঙ্গীণ ভাস্কর্যের টেরাকোটা খসে খসে পড়ছে সাঙ্গ রূপকে।খিদেয় জ্যান্ত হয়ে উঠছে হস্তমুদ্রাগুলো।নোনতা ফিনফিনে আলোয় আশু দলুইয়ের সালতি চেপে বনভোজনে চলেছে একদল যুবক। দামোদরের হাওয়া টেনে রাখে দাঁড়। ধূসর মকরের মতো চরাচরে ছায়াজাল দাঁড়ি আর কমা তুলে এনে বসিয়ে দিয়েছে হিম বসন্তরাগে। মাট্রিন ট্রেনের লাইট জল্লাদের পোশাক পড়ে ভোঁ বাজিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে আদিগন্ত কেদোর মাঠ।এক কাঁদি লাল ডাব ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে রক্ততঞ্চনের ভাষা নিয়ে। তুই আজীবন আইবুড়ি থেকে যাবি যক্ষিণী! অনুকৃতি মুখ তিরস্কারের স্বরবিতান নিয়ে দাঁড়িয়ে। কাঁচা ডুডুরের চোখ নিষ্পলক;একাকী...

ভাত ফুটছে মেয়ে মদ্দানি বাচ্ছাটাকে সাপটে বেঁধে আছে কোমরে। কালো হেঁসোর মতো চকচক করছে ওর পিঠ। আজ মকরস্নানের দিন নারুগ্রামে এসে হাজির হয়েছে বিশু মালিকের দল। লুপ্ত অক্ষর সেজে উঠছে উড়নির ফাঁকে ফাঁকে। ময়ূরপঙ্খি গান ভেসে চলে... উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়নে…

ফাঁকা মাঠে শিয়ালের হাসির ভিতর রক্তের ছোপে ভীষ্ম শুয়ে আছে অম্বার অভিশাপের আদল নিয়ে কালচক্র ঘুরছে... সাধুবাবারা কমন্ডলু নিয়ে একে একে এসে হাজির হচ্ছে ভুশুণ্ডির মাঠে ডাকিনী বিদ্যা শিখবে।কচ্ছপের লকলকে জিভের মতো জ্বলে উঠছে  রজতঅগ্নি…


আরুণি পাখির লিপি


সরু তারে পাখির বাসায় নিশ্বাসের শব্দ;ঘুম জমে আছে ফোঁটা ফোঁটা...একটা নকল দাঁত বানিয়ে নিচ্ছে মানসকন্যা।ছাই হয়ে যাচ্ছে পিপীলিকার সাকিন-দিনলিপি।লক্ষ্মীর নিঝুম ঝাঁপি খুলে বসেছে স্বেচ্ছাচারী প্রান্তর।আঁধারের পাঠক্রমে অর্গলমুক্ত ঝরাপাতার আগুন উঠে আসে বনান্তরে।আমাকে ডিঙিয়ে চলে যাচ্ছে আদিম কালো শোকরেখা--পাক খাচ্ছে জাদুকর; জন্মছকের ভিতর। ইক্ষুবন রাইকিশোরীর জড়োয়া-ঝুমকো হয়ে বাজছে; কয়েক কিসিমের কল্পলতা আহ্লাদের রেণু মাখাচ্ছে দু'গালে। একটা মেয়ে কুকুর  করুণ সুরে কেঁদে চলেছে ধনঞ্জয় ঘাসের ঝোপে; ঈর্ষামাখা চাঁদ। চালাঘর থিকথিক করছে বল্মীকে।বিষজল সেঁচে এইমাত্র বাঁধ দিল আরুণি--পরিচ্ছিন্ন রক্তপ্রবাহে শুয়ে পড়ল অস্তগামী দিবাকর।আয়োদধৌম্য ফিরে এলেন--রঙিন গিরগিটি গুলো তখন মসনদ পেয়ে এ গাছ থেকে ওগাছে লাফিয়ে রেশমমথ ধরছে। উদ্দালক আকাশের দিকে তাকিয়ে।আয়োদধৌম্য--সেতু পেরিয়ে চলে যাচ্ছে চেরাজিভ, শরবিদ্ধ লাশ। অক্ষয় তারাগুলো পুড়িয়ে ফেলছে খোলস। উগ্রধূপের গন্ধ...নিসিন্দার জঙ্গলে নিশি নামে; ক্ষীণ আয়ুটুকু নেবে বলে।

ঘুমের পলক নীল কাজল--আটপৌরে শাড়ি পড়ে বসে আছে কাঠের পিঁড়িতে।আয়োদধৌম্য দেখছেন রক্তকেশী সভ্যতার কলহান্তরিতা নারীকে।তার সুনৃত বচন পাপ পরিত্রাণের মন্ত্র।মেদবহুল হেদোকামার যেন উপমুন্য সেইরাত ভাঙা ভাঙা শস্যদানা তুলে দিচ্ছে গুরুর হাতে...জলাশয়ের ভিতর থেকে  উঠে আসছে আরুণির বৈভাসিক মুখ…


বেরিয়াম থেরাপি


জ্বর আসে গোপনে মাকড়সার মতো, সিঁদুর কৌটোয় রাখা কৃষ্ণকায় বিষপাথর ভিতরে ভিতরে   হেঁটে চলেছে। বাঁচার চকচকে কৌশল।চুপ থাকি!এই বুঝি ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো,ভাঙা মাটির নল দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল ...আরোগ্যের রূপাভাস কাগজ হাত ছুঁয়ে আছে জানলায়। মা- জলপটি দেয় দমকা হাওয়া ঘরে ঢোকে বিশ্রামের পর বেরিয়ে যায়; বাবার মতো।কতকাল কোলে মাথা রাখেনি রতিচাঁদ।বীজের কোরক পুড়ে গেছে জ্বরে ...বিলীন হয় আমোদ।গগন হরকরার সুরে যেন বাইরের রাস্তায় গান গেয়ে গেয়ে চলে যাচ্ছে আস্ত বিকেল; ডোবার জলে গলুই চাপার ছপছপ শব্দ হয়।কারা আজ আমার শরীরের মধ্যে পাঁক সরিয়ে জিওল মাছ ধরতে নেমেছে। চাপ লাগছে খুব কোমরটাকে চেপে ধরে বসেছে এক আহাম্মক ছায়ামূর্তি। চোখ বুজলেই সাদা বালিশ তাকিয়া হয়ে যায়।মনে হয়ে এই বুঝি কেউ আমায় তুলে নিয়ে যেতে এসেছে গহনকুঞ্জে। তৃণবৃন্ত খাড়া হয়ে দেখছে আমাকে ঘিরে মাকড়শার প্রস্তরিক নকশা-জাল।প্রান্তরেখায় মাকড়শাটা উঠছে আবার নেমে যাচ্ছে :ঘুরিয়ে নিচ্ছে দাড়া। জ্বর বাড়ছে...বেরিয়াম থেরাপি চলছে।সেই বেরিয়াম গন্ধ ফকিরের নিশ্বাসে, মাথার কাছে এসে বসেছে।হাঁ করিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছে তদবির খানার সাদা পুরিয়া।গা গুলিয়ে ওঠে; মারণসন্ধির আকাশে বাড়ছে আদিখ্যেতা দেখানোর ঝোঁক।আমার মুমূর্ষ, দুর্দশার কথা শুনে  দরজার শিকলটা হঠাৎ হাততালি দিয়ে উঠল। বোকা হনুমান  তুই বুঝলি না!বিষ এমন করেই পারায় ওঠে আবার নেমে যায়। মাথা,বুক ঝেড়ে ঝেড়ে।হাতপাখাটাও ঐকিক নিয়ম শিখে গেছে।এখন আর ওর ভুল হয় না নির্ণায়ক হিসেবে।জমিতে লিটমাস জ্বলে...ব্রাহ্ম মুহূর্তে আমিও উঠে বসি গোলার্ধের
আড়াআড়ি। ছেঁড়া-ফাঁসা জামাগুলো কাচবার জন্য সাবান-লাঠি তোলপাড় করছে- মা।বালতিতে খানিকটা নীল গোলা আছে, মৃত্যুর ঝলক দিয়ে। খুপরি ঘরের আরোগ্যপত্রহীন স্যাঁতসেঁতে জীবন নুন হয়ে ফুটে থাকে জামায়... মাকড়শার জাল নড়ে।নুন জমে জমে অশ্রুনদী; রাঙামাটির পথ বেয়ে নেমে  যায় ভূস্তরে...

পিয়ারা গাছের ফাঁক দিয়ে ছিন্ন দর্পণ ফেলে রেখে এইমাত্র কবি পাখি হয়ে উড়ে গেল…


ছাপাখানার কালি


খুচরো খেয়ে গেছে তোমার রাগ,কাঁঠালিচাঁপার মনচোরা আগুন উঠছে আশমানের তার বেয়ে,নেমেও যাচ্ছে বাঁশপাতার শ্বাস। বিদুর দাঁড়িয়ে শুনছেন সেই কার্বাঙ্কলের গান। কালরাত্রি, আড্ডাঘর ঘুমিয়ে পড়েছে চাট্টি ভাতে ভাত ফুটিয়ে নিয়ে।দাঁতের মাজন বিক্রি করতে গিয়ে দরজা খুলে দিল একটা তে'চোখো মাছ।ভিতর বাইরে ঘুরিয়ে দিচ্ছে বল্গাহীন টারবাইন জল...কনীনিকা নারীর ঘিলু ছিটকে এসে লাগে।ফাঁকা হয়ে যায় মৌচাক। কতটা ঘসে ঘসে বাসন মাজছে জ্যোৎস্নারাত। আমি ওর বয়ন শিল্প,ছত্রমুখ আস্তরণ।হাজিরা খাতায় রোজ লিখে চলি ঘোড়দৌড়।

মায়াজম টিনের কৌটোয় মুড়ির কুটো রেখে চলে গেছে মিথ্যাচার, রাজাধিরাজ আর ফিরবে না--পাউডারের সুগন্ধি পাফ মাখিয়ে দেবে না --প্রেমাভাস,শিশির স্পর্শ।মাটির ঘোড়ার জিন পাক দিচ্ছে বাসবদত্তাকে।

পদ্মপাতায় ভেসে চলে কস্তুরী পণ্য।জেঠুর তোয়ালের মধ্যে রাখা --ঠাকুমার সম্পৃক্ত স্নেহ,জড়িবুটি।রোজ দেখি ওড়না উড়ছে মগজের অলিন্দে বিষক্ষয় কাক তাঁবুর উপর গুচ্ছ গুচ্ছ সোনার হাতা তুলে আনে।ভাষাবদলের ষড়ঙ্গ মাস্তুল দুল্যমান চতুর্যাম--বধিরতা ঘুচে যায় দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে দার্শনিক।পাথর ঝড়ে উড়ে গেছে তর্জনীর কোণ।যবের শিষগুলো বিদ্যুৎধ্বনির সাথে নামাবলি চাপিয়ে নিচ্ছে।পঞ্চশস্যের কানে কানে মন্ত্রসার বীণ।তাপ্পিমারা আমাদের সংসার।বাঁচার প্রিয়দর্শী মুখ আঁকা পর্দা খিলানের মতো চিড় খেয়ে নেমে আসে। ঠাণ্ডা-ভাত-ডাল-নিরামিষ পরমান্ন জেনেসিস রাতগুলোয় কৃষ্ণপল্লীর পুকুরে ভাসছে কুঁজো নৌকা। নন্দরাজার ইঁট খুললেই বেরিয়ে আসছে প্রাকৃত সম্ভার। এতক্ষণ ঘাপটি মেরে বসেছিল ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস; পাহারা দিচ্ছিল সম্পর্কগাছ।চোয়াল চাপা জহুরির চোখ জুড়ে ঋতুমতী বৃষ্টি নামল --কলোসিয়ামে কয়েকটা টিনোফোরা এখনো চলমান।তার প্রদক্ষিণে ভয় পেয়ে গেছে চতুর বেঁজি।অভ্রগুহা থেকে আঁকশি দিয়ে কাচ-চুন খসিয়ে নিচ্ছে টুপি পরা সারভান্তিস।সৌরবচনের গ্রথিত মুখোশ  উড়ে গেল এইমাত্র।পিত্তরস মাখা ভাত খাচ্ছি, আহ্লাদ করছি--অ্যাকিলিস গোড়ালির ছায়া; পাশে বসে আছে সুখসারি নারী।পশুপাখির রোম, কূর্মগ্রীবা ব্যঞ্জনার পললরেখা--সংকেত পাঠায় আলব্রাটস ডানা--সাক্ষ্য করে অভিকর্ষিক দূরবীণ।

এই পর্যন্ত লিখে গদ্যটা শেষ হতে পারত কিন্তু ঐ যে গোলাপি কাচঘর সব ওলট-পালট করে দিল।পেয়ে বসল যাদুদণ্ডের মাথা; ভেঙে দিয়ে গেল সব নষ্টামি।রাঁবোর কবিতা তালপাতার উপর রেখে গেল পরাবাস্তব চিঠি, মার্কোয়েজ কান্না। রক্তের সিন্ধুপ্রদেশে হিল্লোল তুলল মৎস্যকন্যা। আমিও গিয়েছিলাম জোকারের সাথে মোদকের দোকান থেকে দইবড়া কিনব বলে।অবন্তীনগরে তখন কাঠের পাটাতনে বাটালি দিয়ে ভঙ্গিমা খোদাই করছে হড়ামিস্ত্রি।ল্যাম্পপোস্টের পাশে মেথর উল্টে দিয়ে গেল স্বর্ণবিষ্ঠার বালতি।সারা গায়ে তখন সৌরপারদে চড়চড় করে ফুটছে জলফুসকুড়ি--রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে ছাগল দুধের সর।মাথায় ঔপনিষদিক পুঁটলি নিয়ে গামছা গায়ে হেঁটে আসছে ভেগা বামুন। তুমি ঘুমিয়ে পড়ছো আকাশ...লিয়েন্ডার সাগরের জলে স্বর্ণ অঙ্কুরের খোঁজে কলম্বাস।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ট্রোজানের ঘোড়া।লটারির টিকিট ছিঁড়ে ফেলছে দাশুবাবু;দশদিশি ভূমিময় কালোজিরের ঝাঁঝ। স্বপ্নে আপেল বাগানের ছায়া নড়ে ওঠে ফাঁকা ফ্ল্যাটের মতো। সেখানে বসে নিভৃতে আলপনা আঁকছে জনক কন্যা। তার বিনুনির প্রান্তে যেন রাবণের পুষ্পক রথ এসে নেমেছে,কেটে কেটে নিয়ে যাবে স্বপ্ন-বাস্তবের কারুকাজগুলো।

লালচশমা ফুটো পয়সার গর্তে,ঘোড়া দৌড়চ্ছে দ্বৈপায়ন হ্রদে--বসে আছে একটা মহাকবিতা--কুটিরের আড়ালে চটসেলাই করছে--শুনছে মোসাহেবী; মশাদের দূরারোহী সন্দর্ভ।নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে- বাবা।পান্তাভাতের থালায় খেলা করছে সেই তে'চোখো মাছ...

একদিন জন্ম নিতে,নিতে আমরাও বিন্দুসার --গুটেনবার্গের ছাপাখানার কালি…

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: নক্ষত্র জন্মের গান : সৌরভ দত্ত'র পাঁচটি কবিতা
নক্ষত্র জন্মের গান : সৌরভ দত্ত'র পাঁচটি কবিতা
নক্ষত্র জন্মের গান : সৌরভ দত্ত'র পাঁচটি কবিতা
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh6cusZy_HMPCDu9w8Hxp586SgHuLJab9v8RpKXURi6JUX3X_4r6G7t_JNAJL_bbx3TUtyx_kebB8aj7XHtdyl3hahMRmtSmUKJ2cua2lvGX8-hghmvu0RqimdF-BOBbXReF3vkJZM0qLU/s320/1630057096134.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh6cusZy_HMPCDu9w8Hxp586SgHuLJab9v8RpKXURi6JUX3X_4r6G7t_JNAJL_bbx3TUtyx_kebB8aj7XHtdyl3hahMRmtSmUKJ2cua2lvGX8-hghmvu0RqimdF-BOBbXReF3vkJZM0qLU/s72-c/1630057096134.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2021/08/Sourav-Datta.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2021/08/Sourav-Datta.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy