.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

সুবিমল, আমফান ও একটি রাত

অমিতাভ দাসে এর ছোটগল্প সুবিমল, আমফান ও একটি রাত
 অমিতাভ দাস

ঝড়টা শুরু হল দুপুর থেকেই। ডিমের ঝোল-ভাত খেয়ে শুয়ে শুয়ে আমফান-ঝড় দেখছিল সুবিমল। আর কিছুক্ষণ পরেই নাকি ১৫০-১৬০ কি.মি বেগে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ঘন ঘন টিভিতে আপডেট নিচ্ছিল। সকাল থেকেই কাকদ্বীপ, বকখালি, নামখানায় বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপট শুরু হয়ে গেছে। টিনের বাড়ির চাল যাতে উড়ে না যায়, লোকজন চালগুলো শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখছিল। টিভিতে দেখেছে। নদী তীরবর্তী লোকজনদের কথা ভেবে খুব চিন্তা হচ্ছিল সুবিমলের। কয়েক বছর আগের আয়লার কথা ভোলেনি সে। 

কিছু আগেই কারেন্ট চলে গিয়েছে। কবে আসবে ঠিক নেই। শুনেছে খুব বড় ঝড় আসছে। যদিও সে ছাদের জলের ড্রাম ভরে রেখেছে। 
ইমার্জেন্সিতে ফুল চার্জ দিয়ে রেখেছে। এই সময় বাবা-মা কাছে থাকলে ভালো হত। তাঁরা তো দু-মাস যাবৎ বোনের বাড়িতে গিয়ে আটকে আছে। লকডাউন না উঠলে ফিরতে পারবে না। 

দু-মাস ধরে সুবিমল বেকার। ছাত্ররা পড়তে আসছে না, সেও পড়াতে যেতে পারছে না। সোসাল ডিসট্যান্স মেনে চলছে। জমানো টাকা ভেঙে খাচ্ছে। তার ওপর এই আমফান ঝড়ের উপদ্রব।

এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ জলের ঝাপটায় ও ঝড়ের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে দেখল বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়ার দাপটে কাচা পাতা উড়ে এসে পড়ছে ঘরের ভিতর। জানালার পাল্লা দুটো ধাক্কা খাচ্ছে তুমুল বাতাসে। সে সঙ্গে সঙ্গে জানলা বন্ধ করে দিল। চারপাশ অন্ধকার না হলেও ঝড়ের দাপট বেড়েছে, সেই সঙ্গে বৃষ্টি। 

বারান্দায় এসে দাঁড়াল সুবিমল। একটা সিগারেট ধরাল। সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। গায়ে কেমন যেন একটা শিহরণ জাগছে। দূরের সুপুরি গাছে, নারকেল গাছের মাথা নাড়ানো দেখছে। ঝড় দেখতে সুবিমলের কেন যেন খুব ভালো লাগে। সে কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। বহু জন্ম আগের কথা কি ওর মনে পড়ে? পূর্বজন্ম কি জেগে উঠতে চায়? কিংবা শৈশব? কই তেমন তো কিছু মনে পড়ে না সুবিমলের।

রাস্তার পাশের আমগাছটা থেকে হাওয়ার দাপটে আম পড়ছে। আম কুড়োতে ভারী মজা। ভাবল, ছাতা নিয়ে গিয়ে আমগুলো কুড়িয়ে আনবে। কিন্তু এই ঝড়ে ছাতা যে উড়ে যাবে--আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাকে আম কুড়োতে যেতেই হবে। ইচ্ছে জোর চেপে বসেছে মাথায়। এদিকে ধীরে ধীরে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে। ঝড়ের বেগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। সে মাথায় একটা গামছা বেঁধে খালি গায়ে নেমে পড়ল রাস্তায়। সাত-আটটা আম কুড়িয়ে নিল। তারপর বাথরুমে গিয়ে গা মুছে ঘরে এলো।

সন্ধ্যা হয়ে গেল। ঝড়ের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। সুবিমল নিজের জন্য চা বানিয়ে বসল নিজের পড়ার টেবিলের সামনে। সোঁ সোঁ শব্দ আসছে ঝড়ের। চা হাতে বারান্দায় দাঁড়ানো যাবে না। সে ঘরের ভিতরে বসেই ঝড়ের শব্দ শুনছিল। কোথায় যেন একটা গাছ ভেঙে পড়ল ভীষণ শব্দে। মনে হল কাছেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চর্ট জ্বালিয়ে দেখল রাস্তার ওপর ভেঙে পড়েছে ওদের বড় কদম গাছের মাথাটা। আবার একটা বিকট শব্দ টিন উড়ে যাওয়ার। খেয়েছে-- সুবিমলের মনে হল গ্যারেজ ঘরের চালাটা বোধহয় উড়ে গেল। ভয় ক্রমশ চেপে বসছে। সমস্ত জগৎ অন্ধকারে পরিপূর্ণ । কালো রঙের একটা ক্যানভাসের ওপর অদৃশ্য কেউ যেন আঁকতে বসেছে। গাছগুলো যেন তাঁর তুলি। নানা মাপের তুলি। তুলি বোলানোর শব্দ ভয়ংকর। সেই অদৃশ্য শিল্পী যেন ভয়ংকর রেগে গিয়ে এই ভাবে কালো ক্যানভাসে এলোমেলো তুলি ঘষে যাচ্ছে।

রাত আটটার পর ঝড় আরো বেড়ে গেল। ঘরের মধ্যেই আর বসে থাকা যায় না। দরজা-জানলার ওপর হাওয়ার দড়াম দড়াম ধাক্কা। কেউ যেন ভেঙে ফেলবে দরজা-জানলাগুলো। বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে অবিরাম শঙ্খের নিনাদ। পাড়াগাঁয় লোকবিশ্বাস যে ঝড়ের সময় শঙ্খ বাজালে ঝড় থেমে যায়। ছাদের ওপর প্রচণ্ড শব্দে কী যেন ভেঙে পড়ল। সুবিমলের মনে হল জলের ড্রামটা ভেঙে পড়ল। সে দ্রুত দোতলায় ছুটল, চিলেকোঠার ঘরে দাঁড়িয়ে দেখল না জলের ড্রাম নয়, কারো বাড়ির টিনের চাল উড়ে এসে পড়েছে ওদের ছাদে।

ঝড়ের গতি এত তীব্র যে, সে বুঝি উড়ে যাবে। এমন হাওয়া সে অনুভব করেছিল গত বছর দীঘাতে বেড়াতে গিয়ে। উফ্ সে কী ভয়ংকর ঝড়!! সে কী সমুদ্র গর্জন!
রাত সাড়ে ন'টার পর ওই ভয়ংকর দাপট বেশ কমে গেল। তবে বৃষ্টি হচ্ছিল। নিকষ কালো আঁধারে দানবের পদচারণা বুঝি শান্ত হল। কিছু আর করতে ইচ্ছে করল না সুবিমলের। রাতে দুধ-পাউরুটি খেয়ে শুয়ে পড়ল। বাইরে ক্রমাগত বৃষ্টি হয়েই চলেছে, সঙ্গে হাওয়া।

শুয়ে শুয়ে স্মৃতির অতল থেকে হারিয়ে যাওয়া কথারা ঠেলে উঠছে। সুবিমলের মনে হল অকারণেই শুয়ে থাকা। ঘুম আজ এ রাতে আসবে না। পাশে রেলবস্তির লোকজনদের কথা মনে পড়ল। কেমন আছে? কীভাবে আছে? এই বিধ্বংসী ঝড়ে ওদের ঘরের চাল নিশ্চয় ভেঙে গেছে। যদিও বিকেলে খবর পেয়েছে যে ওরা ঘরবাড়ি ফেলে দেশবন্ধু স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই রাতের শুকনো খাবার পাবে। এইটুকুই যা নিশ্চিন্ত হবার মতো খবর। পথের কুকুরগুলো কোথায় আছে কে জানে! দুপুরের পর আর দেখেনি ওদের। চিন্তা হচ্ছে।

আরো কত যে কথা মনে আসছে এই আমফান-ঝড়ের রাতে। রুচিরার কথা মনে পড়ল বহুকাল পর। হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটা। আট-দশ বছর আগের কথা। সুবিমলের প্রথম জীবনের উচ্ছল প্রেমিকা। ওর সঙ্গে এক কালবৈশাখির ঝড়ের সন্ধ্যায় আটকে পড়েছিল পথের মাঝে। কাছাকাছি একটা মন্দিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অন্ধকার নৈঃশব্দ্যের ভিতর। দু'জন দু'জনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল। যে বটগাছটার তলায় ওরা প্রথমে আশ্রয় নিয়েছিল, ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙে পড়েছিল তার একটা বড় ডাল। ওর নীচে থাকলে দু'জনের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেত সেদিন-ই। চোখের সামনে মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছিল ওরা সেইদিন। ভয়ে রুচিরা সুবিমলকে জড়িয়ে ধরেছিল শক্ত করে। রুচিরার পেলব পালকের মতো নরম বুকের স্পর্শে আচ্ছন্ন হয়েছিল সে। ঝড় থেমে গেলে পর অনেক অলিগলি পেরিয়ে অন্ধকারের ভিতর বুকভর্তি ভয় দ্বিধা ও সংকোচ নিয়ে রুচিরাকে পৌঁছে দিয়েছিল ওর বাড়িতে। ফিরেছিল অনেক রাতে বৃষ্টিভেজার নরম আনন্দ নিয়ে।

চারিদিকে অন্ধকার। জমাট অন্ধকার। কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে সুবিমলকে আরো অন্ধকারের দিকে। সুবিমল যেতে চাইছে না। চিৎকার করছে। কিন্তু মুখ থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। সে ভয়ের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে অদৃশ্য এক জন্তুর সঙ্গে লড়াই করছে। জন্তুটা মানুষের মতোই অথচ ছায়াময়-- কালো, লোমশ। সে এবার সুবিমলের বুকের ওপর চেপে বসেছে। দু'হাতের দীর্ঘ নখ দিয়ে উপরে নিতে চাইছে সুবিমলের চোখ। বাইরে ঝড়ের সোঁ সোঁ শব্দ। সুবিমল শুনছে কে যেন বাইরে ভারী কিছু টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে ছটফট করছে। অথচ অদৃশ্য জন্তুটা খুব শক্তিশালী। সুবিমল পেরে উঠছে না। মনে হচ্ছে এইবার সে মরে যাবে-- মৃত্যু সমাগত। অদৃশ্য জন্তুটা দু-হাত দিয়ে চেপে ধরেছে সুবিমলের গলা। সে গোঁ গোঁ করছে। হাত-পা অবশ। কোনো শক্তি নেই। হঠাৎ সুবিমলের অভিষ্ট দেবীর বীজমন্ত্রের কথা মনে পড়ল। মনে মনে সে বীজমন্ত্র জপ করতে শুরু করল। মনে হল অদৃশ্য জন্তুটা এবার নেতিয়ে পড়ছে বা শক্তিহীন হচ্ছে আর সুবিমল খুঁজে পাচ্ছে ওর পুরোনো বল। সে বাঁ পা দিয়ে খুব জোর এক লাথি মারল। বিছানা থেকে নীচে গড়িয়ে পড়ল জন্তুটা। 

এতক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেল সুবিমল। সমস্ত শরীর ঘামে ভেজা। বিছানাও ভিজে গেছে অবিরাম ঘামে। সে উঠে বসল। বেড সুইচে হাত দিতেই জ্বলে উঠল আলো। টেবিল থেকে জলের বোতলটা নিয়ে ঢক ঢক করে জল খেল। একটু স্বাভাবিক হল। না বাইরে কোনো ঝড়-বৃষ্টি নেই, থেমে গেছে। দেওয়াল ঘড়িতে রাত তখন তিনটে। 

সুবিমল তাকিয়ে দেখল পাজামার ওপর দিয়ে শক্ত হয়ে আছে ওর উত্তেজিত পুরুষাঙ্গটি। যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে প্রবল রিরংসায়।

মন্তব্য

BLOGGER: 4
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: সুবিমল, আমফান ও একটি রাত
সুবিমল, আমফান ও একটি রাত
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgx7OX1rzyRNwuXp5zWfNNIx48NBT9q2R25TGnJh7kRM2USiEyXgQgxu7DQIYOQVWtJgZ5XGEjsNshE5jHC3ZQW-IwhQ1jD1zMZvjhb-e1m-c9iEP67UlAHfUm-9EidCieMAs4rpxq3sZE/w320-h160/%25E0%25A6%259B%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AA-%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AD-%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B8-%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25B2-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2593-%25E0%25A6%258F%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%25BF-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A4.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgx7OX1rzyRNwuXp5zWfNNIx48NBT9q2R25TGnJh7kRM2USiEyXgQgxu7DQIYOQVWtJgZ5XGEjsNshE5jHC3ZQW-IwhQ1jD1zMZvjhb-e1m-c9iEP67UlAHfUm-9EidCieMAs4rpxq3sZE/s72-w320-c-h160/%25E0%25A6%259B%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AA-%25E0%25A6%2585%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AD-%25E0%25A6%25A6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B8-%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25B2-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2593-%25E0%25A6%258F%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%25BF-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A4.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2021/02/Amitava-Das.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2021/02/Amitava-Das.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy