.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

রাজীব দত্তর কয়েকটা গল্প

রাজীব দত্তর কয়েকটা গল্প
এক

ভাইজান চম্পাফুল গাছটা কই এদিকে জানেন? অইদিকে। তিনি অইদিকে গেলেন। অনেকটুক। নাই অইদিকে। এবার আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি দেখায় দিলেন আরেক দিকে। চম্পাফুল গাছ খোঁজা লোক আরেকদিকে গেলেন। অনেকদূর। গাছ পাইলেন না। এইবার আরেকজনরে পুছ করলেন। তিনিও দেখায় দিলেন। যে দিকে দেখায় দিছিলেন, অইদিকের শেষ মাথায় পৌঁছায় গেলেন হাঁটতে হাঁটতে। এবারও পাইলেন না। এভাবে নানান দিকে খুঁজলেন। খুঁজতে খুঁজতে কাহিল হয়ে গেলেন। বসে পড়লেন কাহিল হয়ে। এমতবস্থায়, এক লোককে পাইলেন যার হাতে চম্পাফুল গাছের পাতা। একতোড়া। দৌঁড়ায় গেলেন তার দিকে। তার মন ভালো ছিল হয়তো। ভালোমতোন বুঝায় দিলেন সব। বুঝেই চম্পাফুল গাছ খোঁজা লোক হাঁটা দিলেন চম্পাফুল গাছ খুঁজতে। পাইলেনও। বড়সড় একটা গাছ। ফুলে ঝুঁকে আছে। সেই ফুলঝোঁকা গাছের নিচে বুড়াসুড়া আরেকটা লোক। প্লাস্টিকের ফুল বেচতেছে। হালি তেরো টাকা।চম্পাফুল গাছ খোঁজা লোক সেই বুড়ার কাছ থেকে তিন হালি প্লাস্টিকের ফুল কিনে নিলেন। তারপর ভালোমতোন প্যাকেট করে রওনা দিয়ে দিলেন দ্রুত। বাসায় যাবেন।

দুই

ঠিক আমাদের মতোই একবার এক লোকের দুইটা পা ছিল। সেও ছোট বেলায় হাঁটা শিখেছিলো। সে হেঁটে হেঁটে গোসল করতে গেলো। আবার হেঁটে বাড়ি এল। এইভাবে হেঁটে ইশকুলে গেলো। পাশ করলো। এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে অনেক হাঁটা শিখলো। একদিন তার ইচ্ছা হলো, হেঁটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবে। তাই সে হাঁটা দিলো। হাঁটতে হাঁটতে পথে মারা গেলো। তার জানাযা হলো। যাদের অইদিন তেমন কোনো দরকারী কাজ ছিলো না, তারা হেঁটে হেঁটে তার জানাযায় এল এবং জানাযা শেষে আবার হেঁটে হেঁটে যার যার বাসায় চলে গেলো।

তিন

একদিন এক মানুষ ওভারব্রিজে উঠল। তারপর নিচের দিকে তাকাল। দেখল সারি সারি মানুষ। সারি সারি গাড়ি। ব্রিজের অপর দিকে তাকাল। অই দিকেও সারি সারি মানুষ। সারি সারি গাড়ি । মানুষ আশ্চর্য হল তাদের কোনোটাতেই কেউ পরিচিত নেই।মানুষ এরপর নেমে আরেক জনের বাসায় চলে গেলো।

চার

পৃথিবী তখন তিনকোণা ছিল। এইরকম গোল ছিল না। তাই মানুষের নীচে তাকাইতে সুবিধা হইত। মানুষের মধ্যে যে সবচে লম্বা ছিল, সে পৃথিবীর তিনকোণা বাহুর সবচে উচু কোণায় দাঁড়ায় নীচে উঁকি দিতো। তারপর পিছনের মানুষদের জানাইতো। পেছনের মানুষ মন দিয়া শুনত। আর এইভাবেই তারা আকাশের ইশারা পাইলো।একদিন এইভাবে দেখতে দেখতে, উঁচা সে লোক হুট করে নীচে নেমে গেল। এত সহজে আকাশে নামা যায়, বাকী মানুষের বিশ্বাসে ছিল না। এই দৃশ্যের পর তারাও উৎসাহ পেল। তারা প্রতি বছর, নির্দিষ্ট এক পুর্ণিমায় নেমে যা্ওয়া শুরু করলো। উৎসবের মতো করে। সেই থেকে একজন একজন করে নামছে। সামনে আমিও নামবো।

পাঁচ

একবার এক বালিকা রাজ্য থেকে পালিয়েছিল। পালাবার আগে সে সাথে করে নিল তার একমাত্র আয়নাখানা। যেটাতে শুধু তার মুখই দেখা যেত। পালাতে পালাতে, রাজ্যের চারপাশে যে বন, যে বনের পর রাজ্যের সীমান্ত, অইখানে পৌঁছে গেল। সে ভাবল, বনের পরই তো রাজ্য শেষ। শেষবারের মতোন নিজের মুখখানা দেখে নিই। সে তার ঝোলা থেকে  আবলুশ কাঠের ফ্রেমের আয়নাখানা বের করল। মুগ্ধ হল নিজেকে দেখে। বাহ! নিজে নিজেই বলল। ঘামে ভিজে গেছে পুরো মুখ। তারপরও বেশ তরতাজাই দেখাচ্ছে। সে আয়নাটা পুরে, দেয়াল টপকে পার হয়ে গেল রাজ্য। রাজ্যের পরই পরই সমুদ্র। সমুদ্রের পারেই একটা নৌকো রাখা। বালিকার অপেক্ষায়। বালিকা নৌকোয়ে উঠবে এসময় আয়নাটা আবার বের করে নিল। তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো,এ কার মুখ!ভাবলো ভ্রম। তাই সে আবার তাকালো। এবারও আগের মতোই। হতভম্ব বালিকা, চারপাশে ঘুরলো। দেখে নিলো চারপাশে। না, সবই বাস্তব মতোনই। তবে, আয়নায় এ কার মুখ! বিহ্ববল বালিকা, হাত দিয়ে নিজের মুখে হাত বুলালো্। এ তার নিজের মুখই। নিজেরই চেহারা।তবে আায়নাই এ কে! ভয়ে জবুথবু হয়ে গেলো মেয়ে। ছুঁড়ে ফেলে দিলো আয়নাটা। নুড়িতে লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো আয়নাটা। দৌঁড়ে নৌকোর দিকে ছুটে গেলো। উঠে দ্রুত খুলে দিল দড়িটা। বৈঠাটা তুলতে যাবে, অদৃশ্য স্বর হেসে উঠলো জোরে জোরে। সে হাসিতে তীব্র বিদ্রুপ। বালিকা আবারো ভাবলো ভ্রম। এ ভেবে, চারপাশে তাকাবার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। পরদিন যখন ঘুম ভাঙলো, সে দেখল শুয়ে আছে রাজবাড়ির গেটে। ভিতরে রাজা বসে আছেন সিংহাসনে। হাসছেন।

ছয়

একবার এক পথিক এক গভীর বনের মধ্যে ফিরতেছিল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পথিক এক গাছের নীচে এসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। যেহেতু ক্লান্ত ছিল, পথিক অইখানেই ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমের মধ্যে দিন ক্রমে রাত হয়ে গেলো। রাত বাড়তে বাড়তে যখন আরো রাত হলো, পথিকের গায়ে কী যেন পড়লো। পথিক জেগে উঠলো। চাঁদের আলোয় দেখলো, তার চারপাশে অনেক ফল। সে একটা ফল কুড়িয়ে নিলো। ফলের গায়ে চমৎকার ঘ্রাণ। ঘ্রাণ পেয়ে পথিকের ক্ষুধা বেড়ে গেল। সে ফলে কামড় বসাবে, এসময় ফলটি আকুতি জানালো। খেয়ো না। খেলে মারা যাবো। কিন্তুু খুব ক্ষীণ স্বরে। ক্ষুধার্ত পথিকের কানে সেই ক্ষীণ আকুতি পৌঁছাল না। সে কয়েক কামড়েই ফলটা শেষ করে ফেলল। আর ক‘টা ফল ঝোলায় পুরে নিল। তারপর পাশের জলা থেকে এক আঁজলা পানি খেয়ে আবার হাঁটা দিলো। পথিক যখন বাড়ি পৌছাল তখন সকাল। পথিকের স্ত্রী-সন্তান সবাই তার জন্য বসে ছিল। পথিক পৌঁছাতেই তারা তাকে জড়িয়ে ধরল। পথিক তাদের হাতে ঝোলাটা তুলে দিল। তারপর ঘরের ভেতর গেল বিশ্রাম নিতে। সারারাত পথ হাঁটা পথিক বিছানায় গা রাখতেই ঘুমিয়ে পড়লো। এইভাবে দিন কেটে গেল। এইভাবে রাত কেটে গেল। পরদিন পাশের বাড়ির আরেক পথিক এই পথিককে ডাকতে আসলো । সে উঠোনেই আসতেই সেই ফলের ঘ্রাণ পেলো। অবাক হলো সে। নতুন একটা ঘ্রাণ। সে ছুটে দরজার কাছে আসতেই আরো অবাক হয়ে গেলো। কোথাও এতটুকু জায়গা নেই। পুরো ঘরভরতি অচেনা এক ফল। আর চারপাশে তার অদ্ভুত ঘ্রান। সেও ক্ষুধার্ত ছিল। সেও খাওয়া শুরু করলো। ফেরার সময় সেও কিছু ফল ঝোলায় পুরে নিলো। এইভাবে চলতে চলতে পুরো গ্রাম ভরে উঠল অপরিচিত ফল ও তার ঘ্রাণে। কোথাও আর মানুষ দেখা যায়নি।

কয়েকটা গল্প
রাজীব দত্ত

মন্তব্য

BLOGGER: 1
  1. নতুন স্বাদ আর ভিন্ন মাত্রার এই গল্পগুলো ভালো লেগেছে। ভাবতে ভালো লাগছে যে আমরা ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেছি আবার।

    উত্তরমুছুন
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: রাজীব দত্তর কয়েকটা গল্প
রাজীব দত্তর কয়েকটা গল্প
বিন্দু। বাংলা ভাষার লিটল ম্যাগাজিন।
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEghF7V22_CeVIhZifdyzjTk1-yJbzICmbyO7_K_3v-vdJ15GEGP2Ak_tlTuwdJ63BszOrbNg4VPTdKBVEQNm-BJl2bRl5cSly1wFXXg9S-wueFgC9sUv9vwVvyVXYxn6ntfpJ3tsOKBhjI6yKhRXoKrxw_RtxPeGfLC96YPmUicaB3SQI6yxjHSI_qB=w320-h180
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEghF7V22_CeVIhZifdyzjTk1-yJbzICmbyO7_K_3v-vdJ15GEGP2Ak_tlTuwdJ63BszOrbNg4VPTdKBVEQNm-BJl2bRl5cSly1wFXXg9S-wueFgC9sUv9vwVvyVXYxn6ntfpJ3tsOKBhjI6yKhRXoKrxw_RtxPeGfLC96YPmUicaB3SQI6yxjHSI_qB=s72-w320-c-h180
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2021/12/Razib-Datta.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2021/12/Razib-Datta.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy